কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

আড়াই হাজারের হলং বাংলো বেসরকারি সাইটে ২১ হাজারি

February 3, 2020 | 2 min read

আড়াই হাজারের হলং বাংলো। ছবি সৌজন্যেঃ northbengaltourism

একে সুন্দরী ডুয়ার্স, তার উপর হলং বাংলো। গভীর জঙ্গলের মধ্যে থাকার বিলাসবহুল বন্দোবস্ত, খাওয়ার পরিপাটি আয়োজন। বাংলোর ঘরে বসেই দেখা যায় হাতি, গন্ডার। হলং নদীর ধারে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ওই বাংলো একদা ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নিয়মিত পূজাবকাশ যাপনের জায়গা।

রাজ্য সরকারের অধীন সেই বাংলোর ঘরের বুকিং এখন কিছু বেসরকারি সংস্থা বেআইনি ভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে পর্যটকদের দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হলং বাংলোর ঘরের ভাড়া যত, তার আট-দশ গুণেরও বেশি দামে বুকিং দিচ্ছে ওই সব সংস্থা।

শুধু পর্যটনের মরসুম নয়, সারা বছরই এই বাংলো নিয়ে কার্যত দড়ি টানাটানি চলে পর্যটকদের মধ্যে। সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বুকিং করতে হয়। এখানেই সমস্যায় পড়েছেন পর্যটকরা। নিয়মমতো ৩০ দিন আগে বুকিং করতে গিয়েও ঘর পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পর্যটকদের। এমনকী, রাত ১২টা নাগাদ বুকিং শুরুর দু-তিন মিনিটের মধ্যেই আর ঘর পাওয়া যাচ্ছে না।

অথচ বেড়ানোর জন্য হোটেল বুকিং করার একাধিক নামী সংস্থার মাধ্যমে অনায়াসে ঘর পাওয়া যাচ্ছে এই ট্যুরিস্ট লজে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য সরকার নির্ধারিত ২,৫০০ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ৮ থেকে ২১ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি বাংলোর ঘর এ ভাবে বেশি দামে বিক্রি করা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া সাধারণ মানুষ যেখানে বুকিং পাচ্ছেন না, সেখানে ওই সংস্থাগুলি কী ভাবে সেই ঘর পাইয়ে দিচ্ছেন— তা নিয়েও ক্ষুব্ধ পর্যটকরা।

যদিও এমনটা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ওই বাংলো বুকিং হয়। এমনটা হয়ে থাকলে সেটা পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা। এটা শুধু গর্হিত কাজ নয়, ফৌজদারি অপরাধ। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যারা এই অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের তরফে ফৌজদারি মামলা করা হবে।’

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মনোজিৎ চক্রবর্তী নামে এক পর্যটক হলং বাংলো বুকিং নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে লিখেছেন, ৩০ দিনের মধ্যেও নাম করা হোটেল বুকিং সংস্থা ঘর বুক করে দিতে পারছে। সেক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ সরকারি ওয়েবসাইটে বুকিং শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আর পাওয়া যাচ্ছে না। এই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য, দু’-এক জন বুকিং শুরুর দিন রাত ১২টা নাগাদ বুকিং পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

যদিও এ ভাবে বেশি টাকার বিনিময়ে ঘর বুকিং করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বেআইনি বলেই মনে করছেন পর্যটন দপ্তরের অনুমোদিত এজেন্টরা। পর্যটন দপ্তর সূত্রে খবর, হলং ট্যুরিস্ট লজে যে কেউ তাঁর নামে পাঁচটি ঘরই বুকিং করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর নামের পাশে সঙ্গে ন’জন বলে উল্লেখ করলেই চলবে।

ফলে সংশ্লিষ্ট দিনে ওই একজন উপস্থিত থেকে তাঁর পরিচয়পত্র দেখালেই বাকি ঘরের অতিথিদের থাকতে দেওয়া হয়। এই সুযোগটাকেই ওই সংস্থাগুলি কাজে লাগাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত।

ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে হলং ট্যুরিস্ট লজে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে একজন ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ওয়েবসাইটেই বুকিং করতে হবে। অন্য কোনও ভাবে বুকিং নেওয়া হয় না।’ তা হলে বেসরকারি সংস্থাগুলি অনলাইনে কী ভাবে ঘরের বুকিং দিচ্ছে? এর উত্তরে বলেন, ‘ওরা কী ভাবে ঘর দিচ্ছে আমাদের জানা নেই।’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘ওরা বেশি টাকা নিলে আপনি ওদের মাধ্যমে বুকিং করবেন কেন?’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #halong bungalows, #bungalow, #Tourism

আরো দেখুন