বইমেলার এবারের ‘থিম’ যেন সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
এ বছর কলকাতা বইমেলার থিম ‘রাশিয়া’। কিন্তু সে তো খাতায়-কলমে। আদপে বইমেলায় ঘুরেফিরে আসছে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে চর্চাই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে পুস্তিকা আর আলোচনাই যেন কলকাতা বইমেলার অঘোষিত থিম হয়ে উঠেছে।
বইমেলার এক কোণে মাটিতে চাদর পেতে বসেছিলেন একদল কলেজ পড়ুয়া। চাদরের উপর রাখা সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী বেশ কয়েকটি পুস্তিকা। কী ভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিপদ সহজে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে বলা যায়, তা নিয়ে জোর তর্ক চলছিল নিজেদের মধ্যে। দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে কোনও বইপ্রেমী কান পেতে আলোচনার মর্মার্থ ঠাওর করার চেষ্টা করলেই তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘এনআরসি-এনপিআর-সিএএ: ভাঁওতার জবাব’ নামের পুস্তিকা। নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে সব বিভ্রান্তির জবাব তিরিশ পাতার বইয়ে মিলবে বলে দাবি ওই পড়ুয়াদের।
অদূরে লিটল ম্যাগাজিনের স্টলে সিএএ-বিরোধী বইই খুঁজছিলেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধ। কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘এনআরসি আসলে আরও এক বার দেশভাগের চক্রান্ত। কিন্তু সেটা যুক্তি দিয়ে পরিচিতদের বোঝাতে চাই। সে জন্যই ভালো বই খুঁজছি। দেখা যাক পাই কি না।’
‘নিজের দেশে রিফিউজি হব’ শীর্ষক বইটি লিটল ম্যাগাজিনের স্টলে নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে কলেজ পড়ুয়া সুলগ্না দাস বললেন, ‘আমরা যাঁরা সিএএ-র বিরুদ্ধে, তাঁরাও কি বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করছি? কোনও বিষয়ের গভীরে ঢোকার অভ্যাসটাই তো চলে গিয়েছে আমাদের। সিএএ নিয়ে আরও লেখালেখির প্রয়োজন।’
সিএএ হোক বা এনআরসি—এ সবের মূলে যে সঙ্ঘ পরিবারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভাবনা-চিন্তা, সেটা নিয়ে বই লিখেছেন সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায়। আরও অনেকের মতো তিনিও বইমেলার এ-স্টল, সে-স্টল ঘুরে উল্টে-পাল্টে দেখছিলেন সিএএ এবং এনআরসি সংক্রান্ত বইপত্তর। তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র স্টলে গিয়ে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এনআরসি-বিরোধী বই নিয়ে পাঠকদের উৎসাহ তুঙ্গে। সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’র স্টলেও বেশ চাহিদা এনআরসি বিষয়ে নতুন দু’টি পুস্তিকার।
তবে এর পাশাপাশি সিএএ-র সমর্থনে বই-পুস্তিকারও খোঁজ করতে দেখা গিয়েছে অনেককে।