বইমেলা বন্ধ, ময়দান ফিরে পেল সবুজ?
এককালের বইমেলা প্রাঙ্গনে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা শীর্ণকায় গাছগুলি সে কথা বলছে না। নতুন গাছ বাড়তে সময় নেবে ঠিকই, তবে তাতে অপুষ্টির প্রভাবও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কোথাও আবার খালি জমি ভরেছে বড় বড় ঘাসে। সেভাবে বনসৃজন হয়নি। সরু গাছের সারির উল্টো দিকে ঘন জঙ্গল, রয়েছে বেশ কিছু পুরোনো গাছ। এককালে যেখানে লিটল ম্যাগের পোস্টার ঝুলত। এখন সেখানে পাখিদের কলকাকলি। তবু চোখ বন্ধ করলে সামনে ফুটে ওঠে কলকাতার পুরোনো বইমেলার মাঠ।
কলকাতার ‘ফুসফুস’ ময়দানকে বাঁচাতে আদালতের কাছে তৎকালীন রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, এখান থেকে সব মেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। সেই অনুসারেই ২০০৭ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্র ছাড়তে হয়েছিল কলকাতা বইমেলাকে। তার পরে কলকাতায় বায়ুদূষণের মাত্রা কমাতে ওই চত্বরেই লাগানো হয়েছিল হাজারখানেক গাছ। পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত উদ্যোগী হয়ে ওই সব গাছের অন্নপ্রাশনও করিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘৪০০০ চারার মধ্যে যে কয়টি বেঁচে আছে, তারা গায়ের জোরে বেঁচে আছে। তাদের কোনও যত্ন নেওয়া হয় না। রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। কলকাতার ফুসফুস বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।’
ময়দান থেকে মেলা সরে যাওয়ার বছর দু’য়েকের মধ্যেই লাগানো হয়েছিল শাল, পিয়াল, ছাতিম-সহ বিভিন্ন গাছের চারা। কিন্তু তেরো বছরেও ময়দানের ওই এলাকা সবুজে মোড়া হয়ে উঠল না। অথচ এর থেকে কয়েকশো গজ দূরেই পিয়াল-শালের একটি ঘন বনাঞ্চল রয়েছে। রাজ্য বন দপ্তরের একটি সূত্র জানাচ্ছে ২০০৪ সাল নাগাদ ওই গাছগুলি বসানো হয়েছিল। সেখানে যত্নও হয় গাছের। এই বৈপরীত্য কেন? কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, ‘ময়দানের দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। সেই অনুযায়ী ওখানকার দায়িত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীর। আমাদের নয়।’
পুরোনো বইমেলার আশপাশে গাছের রক্ষণবেক্ষণের অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তিনিও এর জন্য দায়ী করেছেন সেনাবাহিনীকে। সুভাষ দত্তের ৪০০০ চারা বসানোর দাবি উড়িয়ে রাজীবের মন্তব্য, ‘সেনা এবং বন দপ্তরের চুক্তি অনুযায়ী ওই জায়গায় ৩০০০ গাছ লাগানোর কথা ছিল তিন ধাপে। এর জন্য খরচ দেওয়ার কথা ছিল সেনার। প্রথম ধাপে এক হাজার গাছ লাগানোর পরে এক পয়সাও মেলেনি সেনার থেকে। তিন বছর পর্যন্ত ওই গাছ রক্ষণবেক্ষণ করা হলেও পরে আর সেনাবাহিনীর থেকে ওই গাছ রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি মেলেনি। ফলে গাছগুলো অনাদর আর অযত্নেই থেকে গিয়েছে।’ সেনাবাহিনীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এর মধ্যেই সবুজ মেখে দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো বইমেলার মাঠ। কিন্তু সেই সবুজে অযত্নের ক্ষত। তাই কলকাতার ফুসফুসও উপযুক্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না। বইমেলা সরে যাওয়ার এক যুগ পরেও!