কলকাতা তথা ভারতের ‘প্রথম বইমেলা’ ১৯১৮-তেই, জড়িত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
কথায় বলে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার সঙ্গে বইমেলা যোগ করলে হয় চোদ্দো পার্বণ। বইয়ের সঙ্গে বাঙালির নাড়ির যোগ। কলকাতার প্রথম বইমেলাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১০২ বছর আগে। কলেজ স্ট্রিট চত্বর ঘিরে বসেছিল বইয়ের প্রদর্শনী।
তখন স্বদেশির যুগ। বিদেশি পণ্য বয়কট করে স্বদেশি উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে দেশের নানা প্রান্তে। আর তার সঙ্গেই উদ্যোগ চলছিল স্বদেশি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার। সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল ‘বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষৎ’, ১৯০৬ সালে। সেই পরিষদের উদ্যোগেই ১৯১৮ সালের এপ্রিল মাসে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে শুরু হয় ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’। সেই অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে ছিল দুটি প্রদর্শনী। একটি শিল্প প্রদর্শনী, অন্যটি পুস্তক প্রদর্শনী।
‘প্রদর্শনী’ নামে শুরু হলেও, তাতে যোগ দিয়েছিলেন দেশের নানা স্বদেশি প্রকাশক। তাদের মধ্যে যেমন ছিল বেনারসের ‘মতিলাল বেনারসীদাস পাবলিশার’, তেমনই কলকাতার ‘বসুমতী প্রকাশন’ও হাজির ছিল সেখানে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনন্দদেব মুখার্জি মতে, ‘বইমেলা’ নামে না হলেও সেটিই কলকাতার প্রথম বইমেলা। সম্ভবত ভারতেরও প্রথম।
এই পুস্তক প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালা লাজপত রাই, গুরুদাস বন্দোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, সতীশ মুখার্জি, নীলরতন সরকার, চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষের মতো জাতীয় নেতৃবৃন্দ। জাতির বৌদ্ধিক উন্নতির জন্য গ্রন্থকারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অরবিন্দ ঘোষ। প্রদর্শনীর উদ্দ্যোক্তাদের প্রতি আশীর্বাদবাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও।
সে-ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ১০২ বছর। বইমেলার এই দিনগুলোয়, বাংলা তথা ভারতের ‘প্রথম বইমেলা’র ঘটনাটিকে ফিরে দেখা আসলে এক স্মৃতিরই তর্পণ। আর কিছু নয়…
(তথ্যসূত্র: প্রহর)