১৩ ফেব্রুয়ারি চালু হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো
অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে কলকাতার দ্বিতীয় মেট্রো। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনের মধ্যে ট্রেন চলাচল করবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। ১৯৮৪-র অক্টোবরে এই শহরেই চালু হয়েছিল দেশের প্রথম মেট্রো। ইতিমধ্যে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বহু শহরে মেট্রো রেল চালু হয়েছে। প্রথম মেট্রোর চালুর ছত্রিশ বছর পর কলকাতার মুকুটে আরও একটি নতুন পালক যুক্ত হতে চলেছে। দ্বিতীয় মেট্রোর পোশাকি নাম ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। রোজ প্রায় দু’লাখ যাত্রী এই মেট্রো-পথে যাতায়াত করবেন।
এই মেট্রোর একাংশ গঙ্গার নীচ দিয়ে গিয়েছে। তবে ওই অংশের মেট্রো এখনই চালু হচ্ছে না। হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন এবং গঙ্গার নীচ দিয়ে এই মেট্রোর পশ্চিম প্রান্তের অংশ বিবাদী বাগকে জুড়বে। ওই অংশে টানেল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। শুরু হয়েছে প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং লাইন পাতার কাজ। ফলে হাওড়া এবং দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতুর পরে এ বার মাটির নীচ দিয়ে অচিরেই দুই শহর যুক্ত হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সোমবার জানিয়েছেন, রীতি মেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেট্রোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
কয়েক মাস আগে বৌবাজারের টানেল বিপর্যয়ের জেরে অনেকেরই আশঙ্কা ছিল এই মেট্রোর যাত্রা শুরু অনেকটা পিছিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত পিছিয়েছে মাত্র সাড়ে চার মাস। গত অক্টোবরেই কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত অংশের সুরক্ষা ছাড়পত্র দিয়েছিল। তার পর বৌবাজারের এই মেট্রোর টানেল বিপর্যয়ের জেরে উদ্বোধন নিয়ে খানিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে একটি ঐতিহাসিক দিন হতে চলেছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। এই প্রকল্পে জেবিআইসি, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের অংশীদারিত্ব রয়েছে। প্রথম থেকেই প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে রাজ্য প্রশাসন।
১৯৭১ সালে মেট্রোর নকশা তৈরির সময়ে হাওড়া এবং সল্টলেক পর্যন্ত করার পরিকল্পনা হয়েছিল। শহর হিসেবে সল্টলেকের তখন শৈশব অবস্থা। তার পর দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০০১ নাগাদ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার মেট্রো মারফত কলকাতার মধ্য দিয়ে হাওড়া ও সল্টলেককে যুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জাপান সফরে গিয়ে সেই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাপান ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জেবিআইসি)-এর সহায়তা চান। পরে ওই সংস্থার সঙ্গে ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। তার পর দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২০০৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি।
০১৪.৭ কিলোমিটার লম্বা এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৪৮৭৪ কোটি টাকা। তখন ঠিক ছিল এই রুটে মেট্রো চলবে ২০১৪ -র অক্টোবরে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়সীমার ছয় বছরের বেশি সময় লাগল। এর অন্যতম কারণ রুট বদল বিতর্ক। বৌবাজার স্ট্রিট ধরে মেট্রো টানেল নিয়ে যেতে আপত্তি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বর্তমান রাজ্য সরকারও রুট বদলের প্রস্তাব দেয়, যাতে এসপ্ল্যানেড হতে পারে বাকি মেট্রোর সংযোগস্থল। সেই মতো বৌবাজার ছুঁয়ে নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট, সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার, এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে এই মেট্রো যাচ্ছে। আগে ঠিক ছিল মেট্রো বৌবাজার স্ট্রিট হয়ে বিবাদী বাগ হয়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে হাওড়ায় যাবে। এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কেটে যায় কয়েক বছর। তবে বিলম্বের দিক থেকে ছয় বছর অনেকটাই কম। প্রযুক্তিগত কারণে এবং হকার এবং অন্যান্য সমস্যায় প্রথম মেট্রোর সময় লেগেছিল দ্বিগুণ। দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ২৩ বছর। ভবানীপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ৩.৪ কিলোমিটার রাস্তার সময় লেগেছিল ১২ বছর।
সেক্টর ফাইভ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত মোট ছয়টি স্টেশন থাকবে সেগুলি হল সেক্টর ফাইভ, করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম।