ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

পাহাড়-জঙ্গলের বুকে হারানোর ঠিকানা কাফের

February 7, 2020 | 3 min read

এনজেপি, শিলিগুড়ি, সেবক হয়ে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ঠিক একসময় পৌঁছবে ঘন জঙ্গলে। তিস্তা পেরনোর সময় এক ঝলক দেখা দেবে করোনেশন ব্রিজ। তারপর এক টুকরো জঙ্গল সাফারি। যা আনবে রোমাঞ্চ। চা-বাগান, সরু ঝোরা, সবুজের সমারোহ। জঙ্গলের কিনারায় চোখে পড়তে পারে ময়ূরের রোদ পোহানো।

করোনেশন ব্রিজ। ছবি সৌজন্যেঃ holidify.com

সিগন্যালে ট্রেন দাঁড়ালে বিরক্তি মুছিয়ে দেবে পাহাড়ের ক্যানভাসে গুলমা নামের এক ছোট্ট স্টেশন। রেললাইন ক্রমশ বাঁক খেয়ে ঢুকে পড়েছে অরণ্যে। ট্রেন ডামডিম পেরোতেই মালপত্র নিয়ে দিতে হবে দরজায় লাইন। নিউ মাল হল ডুয়ার্সের প্রবেশদ্বার। অধিকাংশ ডুয়ার্স যাত্রীর গন্তব্য এটাই। অথচ, ট্রেন থামে মিনিট দুয়েকের জন্য। লাগেজ নিয়ে নামতে হুড়োহুড়ি হবেই।

নিউ মাল। ছবি সৌজন্যেঃ অবসর

গাড়িতে লোলেগাঁওয়ের রাস্তা ধরে ঘিস নদীর ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ি পথে পাক খেয়ে ক্রমশ উঠতে থাকবে উপরে। ঝকঝকে রোদ। পাহাড় যেন সত্যিই খিলখিলিয়ে হাসছে।

একসময় বাঁ দিকে চারখোলের রাস্তা ফেলে ধরতে হবে জঙ্গুলে পথ, এবড়ো-খেবড়ো, পাথরে ভর্তি। তার উপর রাস্তা বড় করার জন্য চলছে গাছ কাটা। যা ডাঁই করে ফেলা রয়েছে পথে। পাথর-কাদা-গাছ মিশে কোথাও কোথাও বেশ পিচ্ছিল হয়েছে যাত্রাপথ। লাফাতে লাফাতে একসময় পৌঁছবেন লোলেগাঁও। স্বস্তি। অবশেষে মিলবে চকচকে মসৃণ রাস্তা।

লোলেগাঁও। ছবি সৌজন্যেঃ adarbepari

কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের ঢুকবেন ঘন জঙ্গলের গহীনে। যে রাস্তা, স্থানীয় ভাষায়, ‘ড্যান্সিং, ডেঞ্জারাস।’ কোমর-পিঠ খুলে আসার দাখিল। মিনিট দশেক পরেই চোখের সামনে আচমকা ঘটল ভোজবাজি। পাইন, ফার, শালের ঘন জঙ্গল হঠাৎই ভ্যানিশ। হাজির ছোট্ট একটা গ্রাম। এটাই কাফের।

কাফের। ছবি সংগৃহীত

লেপচা ভাষায় লোলেগাঁওকেই ডাকা হয় এই নামে। আবার কাফের নামে ৫২০০ ফুট উচ্চতায় এটা খুদে একটা গ্রামও। যাতে ঘরের সংখ্যা মোটে ৩১। থাকেন সাকুল্যে দেড়শো জন। বরফ না পড়লেও শীতকালে এখানে তাপমাত্রা কখনও কখনও নেমে যায় হিমাঙ্কের হাতছোঁয়া দূরত্বে।

গাড়ি থেকে নামতেই টের পাবেন হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা। পশ্চিমে পড়ন্ত বিকেলে উঁকি মারবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এখানে সবাই থাকেন পাশাপাশি, বিপদেআপদে একসঙ্গে। এমনকি, খাওয়াদাওয়ার পরে দুপুর তিনটে নাগাদ সবাই মিলে একসঙ্গে গল্প করতে করতে চলে চা-পান। আবহাওয়া, পরিবেশ প্রতিকূল বলেই এই একতা মন ভাল করবে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি সৌজন্যেঃ factsbd

চাইলে এখান থেকে সাইটসিয়িংয়ে বেরিয়ে দেখা যায় লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ। সূর্যোদয় দেখতে ঘুরে আসা যায় ঝান্ডিদাড়া। আবার না-ও যাওয়া যায়। ঘর থেকেই যে সানরাইজ দেখা যাচ্ছে দিব্যি।

লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ। ছবি সৌজন্যেঃ eibangla24x7.com

হোমস্টে-র ঠিক নীচেই রয়েছে কয়েক ঘর বসতি। লোয়ার কাফের বলা হয় এখানকে। প্রতিটা বাড়িতে বাহারি ফুল। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনও বেরঙিন নয়। বরং রঙের প্রাচুর্যে প্রাণের ছোঁয়া। মাথায় রাখুন, পাহাড়িয়া মানেই সরল, আন্তরিক। এই আন্তরিকতা সমতলে বিরল!

লোয়ার কাফের। ছবি সৌজন্যেঃ আনন্দবাজার

যাত্রাপথ: নিউ মাল স্টেশন থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগবে। বাগরাকোট হয়ে লোলেগাঁও এসে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরও কয়েক কিমি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পং, লাভা হয়েও আসা যায়।

ভাড়া: হোমস্টে থেকেই গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিউ মাল স্টেশনে। ভাড়া সাড়ে তিন হাজার। তবে এনজেপি থেকে গাড়িতে এলে পড়ে চার হাজার টাকা। বাগডোগরা থেকে এলে পড়বে সাড়ে চার হাজার টাকা। মরসুম অনুসারে বাড়তেও পারে। তবে, বুকিংয়ের সময় সাম্প্রতিকতম ভাড়া যাচাই করে নেবেন।

রাত্রিবাস: কাফের হোমস্টে।

থাকাখাওয়ার খরচ: জনপ্রতি দৈনিক ১৫০০।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Tourism, #Bengal, #kaffer, #hamlet

আরো দেখুন