বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বইমেলায় মিলে গেল কাবুল–ঢাকা–কলকাতা

February 8, 2020 | 3 min read

এক আফগান লেখক নেমাত সাদাত। মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে সমলিঙ্গ বিবাহের সপক্ষে সাদাতই প্রথম এবং একমাত্র লেখক, গোটা আফগানিস্তানে এলজিবিটি–দের হয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। এবার বইমেলায় তাঁর নতুন উপন্যাস ‘‌দ্য কার্পেট উইভার্স’‌।

উপন্যাসের নায়ক দুই পুরুষ কার্পেট শিল্পী। পরস্পরের প্রেমে পড়েছেন তাঁরা। প্রকাশক পেঙ্গুইন। স্টলের ভিড়ে সাদাতকে পাওয়া গেল এক কোনে। ৬ ফুটের দীর্ঘাঙ্গ আফগান। একঝলকে লাগবে ইউরোপীয়। লেখার বিষয়ের জন্য দীর্ঘ দিন দেশ থেকে বিতাড়িত। বর্তমান ঠিকানা আমেরিকা। বললেন, ‌‘এই উপমহাদেশে এখনও এলজিবিটি–দের পক্ষে নিরাপদ দেশ ভারত।’ পেঙ্গুইনের এবারের বেস্ট সেলারের তালিকায় রয়েছে সাদাতের বই।

সংগৃহীত চিত্র

বেস্ট সেলারের তালিকায় আছে আম্বেদকারকে নিয়ে লেখা বইও, রয়েছে হাউ ফ্যাসিজম ওয়ার্কস। সব বইয়েরই ক্রেতা অল্পবয়সীরা। বইয়ের মলাটই বলে দিচ্ছে, কোনদিকে ঝুঁকছে আজকের তরুণ প্রজন্ম। মিডিয়া সেন্টারে উদ্বোধন হল সর্বশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘‌বাংলার চলচ্চিত্রে স্বতন্ত্র নারী’‌। ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছেন যুক্ত প্রকাশনার নিশাত জাহান রানা। দুই বাংলার দুই নারীর যৌথ শ্রমের ফসল এই বই।

বাংলাদেশের স্টলে দেখা গেল মার্কসের ‘‌দাস ক্যাপিটাল’‌–এর সম্পূর্ণ অনুবাদ পাঁচ খণ্ডে। অনুবাদ করেছেন ৭৪ বছরের দাউদ হোসেন। বইয়ের টানে এসেছেন কলকাতা বইমেলায়। আবার কাকলি প্রকাশনার স্টলে হুমায়ুন আমেদের বই ঘুরছে তরুণীদের হাতে হাতে। এভাবেই এবারের বইমেলায় মিলেমিশে একাকার কাবুল–কলকাতা–ঢাকা। সীমারেখাহীন সেই বহুত্ববাদী ভারত এখনও শব্দের মালায় একই সূত্রে গাঁথা। সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে উপমহাদেশ জুড়ে নিঃশব্দে বহমান এই স্রোত।

বাংলাদেশের স্টল।নিজস্ব চিত্র

এদিনও চেনা ভিড়ের দেখা মিলল আজকাল–এর স্টলে। পাঠকদের আকর্ষণ করছে সুমন্ত্র সেনগুপ্তের আবৃত্তিযোগ্য কবিতা, গদ্য ও চিঠির সঙ্কলন ‘‌শঙ্খমালা’‌, কণিষ্ক ভট্টাচার্যের ‘বাংলা ত্রস্ত নীলিমায়’, সাদিক হোসেনের ‘হারুর মহাভারত’, অনির্বাণ বসুর ‘অ–এ অজগর আসছে তেড়ে’, প্রগতি বৈরাগী একতারার কবিতার বই ‘লোভ বলতে যতটুকু বুঝি’, তরুণ চক্রবর্তীর ‘এনআরসি: একটি দুঃস্বপ্ন’, অশোকেন্দু সেনগুপ্ত সম্পাদিত ‘ভারত: বিষণ্ণতার আলো’।

এ বছরও পাঠকদের রুচি অশোক দাশগুপ্তের ‘নেপথ্য ভাষণ’ নিয়ে। ‘মানিকদার সঙ্গে’, ‘ষাট দশকের ছাত্র আন্দোলন’ আগেই নিঃশেষিত। হতাশ হয়ে ফিরছে পাঠকদের। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাজার সমগ্র, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমগ্র, হিমানীশ গোস্বামীর ৫০টি গল্প— এ সব বই পাঠকদের কাছে আজও একইরকম জনপ্রিয়। সন্ধের দিকে আজকাল–এর স্টলে এলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। কিনলেন পছন্দমতো বই।

বইমেলা।নিজস্ব চিত্র

আলিয়া ইউনিভার্সিটি দু’‌খণ্ডে প্রকাশ করেছে এস ওয়াজেদ আলির রচনাসমগ্র। স্টলের কর্মীরা বললেন, মূলত বয়স্করা আসছেন এই বইয়ের খোঁজে। প্রশ্ন করছেন, ‘‌ভারতবর্ষ’‌ গল্পটা সঙ্কলনে আছে তো? সদ্যপ্রয়াত নবনীতা দেবসেনের বই ঘিরে পাঠক–পাঠিকাদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্য। এবারই প্রকাশিত হল হিন্দোল ভট্টাচার্যের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘এসো ছুঁয়ে যাই’। প্রকাশক সিগনেট। মেলায় এসেছে দেবাশিস চন্দর দুটি কবিতার বই ‘ভেসে যাব অনিবার্য নীলে’ (‌দি সী বুক এজেন্সি)‌ ও ‘ঘরে ফেরা হয় না’ (‌প্রতিভাস)‌।

এসবিআই অডিটোরিয়ামে কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন তিন কবি। ডিন আট্টা, সোফিয়া ঠাকুর এবং অ্যান্টনিথাসান জেসুথাসান। কবিতা নিয়ে কথার মাঝে উঠে এল রাজনীতি ও কবিতার সম্পর্ক। আলোচনা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সমরজিৎ গুহ। চেনা ভিড়ের দেখা মিলল লিটল ম্যাগাজিনের স্টলেও। বিচিত্র সব বিষয়ের ওপর নানা ধরনের সঙ্কলন, প্রবন্ধ, কবিতা।

লিটল ম্যাগাজিনের স্টল।নিজস্ব চিত্র

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতেই আরও জমাট বেঁধে উঠল ভিড়টা। পাথরে বাঁধানো পথে পথে সেলফি–শিকারিদের ভিড়। এক জায়গায় খোলা চত্বরে গান ধরেছেন লোকশিল্পীরা। দিনের পালা সাঙ্গ করে এবার আসবে ফেরার পালা। তবু যেন ফিরতে দেবে না এই মেলা, আবার আসবে বছর ঘুরে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#kabul, #dhaka, #Kolkata, #Kolkata Book Fair 2020

আরো দেখুন