মহারাজাকে ফেরাতে উদ্যোগী টাটা?
এয়ার ইন্ডিয়া-র ১০০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের কাছে দরপত্র জমা দিতে পারে টাটারা। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণের কাঠামো কী হবে, তা নিয়ে টাটা গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া হাতে এলে টাটারা তাদের যৌথ উদ্যোগ উড়ান সংস্থা এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া-র সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কী ভাবে সংযুক্তিকরণ করা যাবে সেটাও খতিয়ে দেখছে।
মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া-য় টাটা সন্সের ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। সূত্রের দাবি, এয়ার ইন্ডিয়ায় ১০০% প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করার বিষয়টি কেন্দ্র বিবেচনা করছে। বর্তমান নিয়মে সংস্থায় অনুমোদিত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ৪৯%।
ওয়াকিবহাল সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অধিগ্রহণের জন্য এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া-য় ৪৯ শতাংশ অংশীদারিত্বের মালিক মালয়েশিয়ার শিল্পপতি টনি ফার্নান্ডেজের অনুমোদনও চেয়েছে টাটারা। কারণ, এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া-য় দুই অংশীদারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, ফার্নান্ডেজের অনুমোদন ছাড়া টাটা গোষ্ঠী অন্য কোনও বাজেট উড়ান সংস্থায় ১০ শতাংশর বেশি অংশীদারিত্ব নিতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়ার সম্পূর্ণ মালিকানাধীন বাজেট উড়ান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস কিনতে হলে টনির সঙ্গে নয়া চুক্তি করতে হবে।
দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে নয়া চুক্তি শীঘ্র স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এয়ারএশিয়ার সম্মতি পেতে টাটারা এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া-র সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিয়েছে। আর তা বাস্তবে ঘটলে ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে ফার্নান্ডেজের ভূমিকা এখনকার থেকে অনেক বেশি হবে। ফলে, টাটা ও ফার্নান্ডেজ, দুই পক্ষের জন্যই এটা লাভজনক।’
আজ থেকে ৮৭ বছর আগে ভারতের প্রথম উড়ান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল টাটা গোষ্ঠী। দেশ স্বাধীনের পর সেই টাটা এয়ারলাইন্সের জাতীয়করণ হয়ে নয়া নাম হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ফলে, এয়ার ইন্ডিয়া যদি টাটারা অধিগ্রহণ করতে পারে, তা হলে সেটা হবে প্রতিষ্ঠাতার কাছে সংস্থার ফিরে আসা।
এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফুল সার্ভিস ক্যারিয়ার বিস্তার পরিচালনা করে টাটারা। টাটা সন্স চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন সাম্প্রতিক অতীতে বলেছেন, ‘আমরা সংযুক্তিকরণ করা ছাড়া তৃতীয় উড়ান সংস্থা চালাব না।’ এয়ার ইন্ডিয়া টাটাদের ঝুলিতে এলে বিস্তার ও এয়ার ইন্ডিয়ার যোগফলের মাধ্যমে ভারতে ফুল সার্ভিস ক্যারিয়ার ক্ষেত্র টাটাদের একচেটিয়া দখলে আসবে। এয়ার ইন্ডিয়া-র জন্য আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ মার্চ।
এর আগে ২০১৮-তে এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৬% অংশীদারিত্ব বিক্রি করার উদ্দেশ্যে সরকার দরপত্র চেয়েছিল। কিন্তু, একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। এর প্রধান কারণ ছিল, ‘মহারাজা’ বিক্রির পরে সরকারের ২৪% অংশীদারিত্ব রাখার অভিপ্রায় এবং সম্মিলিত ঋণভার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে কোনও রকম প্রস্তাব না থাকা। সেই ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার ক্রেতা টানতে অনেক বেশি আন্তরিক মনোভাব নিয়েছে কেন্দ্র। সেই কারণেই নিলাম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর যারা এয়ার ইন্ডিয়ার নয়া মালিক হবে, তাদের উপর সংস্থার ২৩,২৮৬ কোটি টাকার মতো ঋণভার পড়বে, যা ২০১৮ সালের ৬২,০০০ কোটি টাকার থেকে অনেকটাই কম।