এটিএম কার্ড জালিয়াতি থেকে সাবধান
অবিশ্বাস্য কাণ্ড। নিজের ডেবিট কার্ড (যা এটিএম কার্ড নামেই বেশি পরিচিত) সযত্নে নিজের পকেটে। অথচ তার হুবহু নকল বানিয়েই টাকা তুলে চম্পট দিয়েছে প্রতারণাকারীরা!
এমন খবর আকছার কানে আসে এখন। কখনও ডেবিট কার্ড জালিয়াতিতে টাকা তুলে নেওয়া। কখনও ঢুকে পড়া ক্রেডিট কার্ডের সিঁধ কেটে। আর নেট ব্যাঙ্কিংয়ে তো কথাই নেই। বাড়ি বসে যাবতীয় লেনদেন সেরে ফেলার সুযোগ যেমন সেখানে আছে, তেমনই ওত পেতে আছে হ্যাকার হানার ভয়ও।
টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে লাইন দেওয়ার কথা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছি। অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এটিএম কার্ডে। ঠিক তেমনই পকেটে টাকার গোছা নিয়ে ঘোরার জায়গা নিয়েছে ক্রেডিট কার্ড। এই সুবিধা আর অভ্যেস ছেড়ে কাল থেকে তো আপনি পুরনো দিনে ফিরে যাবেন না। তা যুক্তিযুক্তও নয়। তাই কার্ড ব্যবহারের কিছু গোড়ার বিষয়ে সতর্ক আপনাকে থাকতেই হবে। তাতে কিন্তু অনেক বিপদই এড়ানো সম্ভব। আজকের আলোচনার অনেক কথাই আগে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে উঠে এসেছে বিষয়-আশয়ের পাতায়। কিন্তু কলকাতায় কার্ড জালিয়াতির এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে যে, এ নিয়ে আরও সচেতনতা জরুরি।
এই ক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরি। তাই মাথায় রাখুন:
• কোনও এটিএমে সুরক্ষার অভাব রয়েছে বলে মনে হলে, তা এড়িয়ে চলুন।
• খেয়াল রাখুন, মেশিনে যেখানে পিন নম্বর দিচ্ছেন (পিন-প্যাড), তার উপরের দিকে কোনও ছোট ক্যামেরা লাগানো আছে কি না।
• মেশিনে কার্ড ঢোকানোর জায়গায় ডুপ্লিকেট কার্ড রিডার লাগানো নেই তো? বাড়তি কিছু লাগানো থাকার সন্দেহ হলে, তা নেড়েচেড়ে দেখুন।
• ঘরে একটিই এটিএম থাকলে, টাকা তোলার সময়ে সেখানে দ্বিতীয় কেউ ঢুকতে চাইলে বাধা দিন। একাধিক এটিএম থাকলে এবং আপনি থাকাকালীন অন্য কেউ তা ব্যবহার করলে, একটু বাড়তি সতর্ক থাকুন। পিন নম্বর টাইপ করার সময়ে অন্য হাত দিয়ে তা ঢেকে রাখুন।
• মাঝেমধ্যেই পিন নম্বর বদলান। অন্য কেউ জেনে থাকতে পারে বলে মনে হলে, তা সঙ্গে সঙ্গে করা জরুরি।
• নিয়মিত ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে নজর রাখুন। আপনি করেননি, এমন কোনও লেনদেনের উল্লেখ থাকলে অবিলম্বে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে জানান।
• কোনও ভাবে এটিএম কার্ড চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ‘হেল্পলাইন’ বা কাস্টমার কেয়ারে ফোন করুন। নিশ্চিত করুন যাতে ওই কার্ড আর কেউ ব্যবহার করতে না-পারে।
• রেস্তরাঁয় খাওয়ার পরে কিংবা বিপণিতে কেনাকাটার শেষে দাম মেটাতে ওই কার্ড কারও হাতে দিলে, সতর্ক নজর রাখুন। চোখ বুজে সই না-করে খুঁটিয়ে দেখুন বিল-ও।
• অপরিচিত ব্যক্তিকে কার্ডের নম্বর কিংবা তথ্য নয়। কাউকে তা জানাতে এড়িয়ে চলুন মেল, এসএমএস-ও।
• পিন নম্বর লেখার সময়ে মেশিনের পর্দায় তা দেখা যাওয়ার কথা নয়। তার বদলে সেখানে ‘XXXX’ ফুটে ওঠার কথা। তেমনটা না-হলে, পুরো নম্বর লিখবেন না। ওই সমস্যার কথা ব্যাঙ্ককে জানান।
• মেশিনে কাজ শেষে কার্ড বেরোতেই চলে যাবেন না। ফের সেখানে পর্দায় (স্ক্রিন) ‘ওয়েলকাম’ ভেসে উঠতে দিন। দেখুন, কার্ড ঢোকানোর জায়গায় আলো ফের ব্লিঙ্ক করছে কি না। বেরোনোর আগে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম টিপে আসা ভাল।
যা করবেন না
• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, পিন, সিভিভি (কার্ডের পিছনে থাকা তিন সংখ্যার নম্বর, যা নেট-লেনদেনে কাজে লাগে), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কাউকে দেবেন না।
• এমনকী ব্যাঙ্কের শাখায় বসে কোনও কর্মী চাইলেও নয়।
• অনেক সময়ে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও বিশ্বস্ত সংস্থার নাম করে ফোন, ই-মেল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতারক কার্ডের পিন নম্বর জানার চেষ্টা করে। ভুলেও সেই ফাঁদে পা দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার তথ্য এমনিতেই ব্যাঙ্কের কাছে আছে। তারা তা নতুন করে চাইবে কেন?
• পিন নম্বর মুখস্থ রাখুন। লিখে রাখলে, অবশ্যই সাংকেতিক ভাবে।
• কার্ড ব্যবহারে অপরিচিতের সাহায্য নেবেন না।
• কার্ডে জিনিসপত্র কেনাকাটার সময়ে সাবধান থাকুন। দোকানে কেনাকাটা বা রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়ার পরে কার্ড সোয়াইপ করানোর জন্য তা অন্য কারও হাতে দেবেন না।
• এটিএম ব্যবহারের পরে ‘ট্রানজাকশন স্লিপ’ ঘরের মধ্যে ফেলবেন না। পরে একটু দূরে কোথাও তা কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলুন।