মেট্রোর চার রুটের হাল হকিকত
আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারী চালু হতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রথম পর্যায়ের রুটে মেট্রো চলাচল। সেক্টর ফাইভ থেকে সল্ট লেক স্টেডিয়াম অবধি চলবে মেট্রো।
অন্যদিকে কাজ চলছে কলকাতা ও শহরতলীর আরও অনেক মেট্রোর কাজ। আসুন দেখে নিই সেই কাজের হাল হকিকত:
নিউ গড়িয়া – বিমান বন্দর
নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের (আরভিএনএল) আশ্বাস সত্ত্বেও এই দু’টো প্রল্পের কোনওটাই নতুন বছরে আংশিক ভাবেও শেষ করা যাবে না। কোনও স্টেশনই তৈরী নয়। নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট তৈরীর কাজও বাকি আছে অনেক জায়গায়। কালিকাপুরে যে স্টেশনটি তৈরী হচ্ছে, তার সামনে একটা পিলার তৈরীর কাজ সবে শুরু হয়েছে। পিলার তৈরীর পর তার উপরে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শুরু হবে।
হাইল্যান্ড পার্ক থেকে নিউ গড়িয়া যাওয়ার পথে বাঁ-দিকে তাকালেই দেখা যায় পর পর সাতটি পিলারের উপর ভায়াডাক্ট বসানোর কাজের পুরোটাই বাকি। এর মধ্যে তিনটে পিলার তৈরীই হয়নি। নিউ গড়িয়া স্টেশনের দিকে এগোলে চোখে পড়ে পিলার তৈরীর জন্য জমি খোঁড়া চলছে। এক বছরের মধ্যে এই রুটে নির্মাণকাজ শেষ করে ট্রেন চালানোর জন্য দরকার অতিমানবিক দক্ষতা।
অন্য দিকে নিউ টাউনে উইপ্রো মোড় থেকে ডিএলএফ ১ পর্যন্ত জমি জট কাটিয়ে মেট্রোর পিলার তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। ডিএলএফ থেকে চিনার পার্কের আগে পর্যন্ত বিশ্ব বাংলা সরণির প্রায় পুরো রাস্তায় পিলার, লাইন এবং বেশ কয়েকটি স্টেশনের কাঠামোও তৈরী হয়ে গিয়েছে।
নোয়াপাড়া – দক্ষিণেশ্বর
মার্চেই যাতে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর রুটের ৩.৮ কিলোমিটারের মধ্যে মেট্রোরেল পরিষেবা চালু করে দেওয়া সম্ভব হয়, কলকাতা মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে সেই চেষ্টাই চলছে পুরোদমে। মূল দেরিটা হয়েছে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটা অংশ তৈরীর সময়। ওই সময় ডানলপ উড়ালপুল মেরামতির কাজ চলছিল। এখন ওই অংশের কাজ শেষ হয়েছে ঠিকই, তবে কেটে গিয়েছে অমূল্য কয়েক মাস। নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর রুট ‘কমিশনড’ হওয়ার উপরে তার প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণেশ্বরে স্টেশন বিল্ডিং তৈরী কাজ পুরোপুরি শেষ। এখন চলছে বিল্ডিংয়ের ভিতরের অংশ তৈরীর কাজ। বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনের কাজ প্রায় পুরোটাই বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে মার্চ ২০২০-তে এখানে ট্রেন চালানোর সে আশা দেখছে কলকাতা মেট্রো, সেটা পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
জোকা – বিবাদী বাগ
জোকা ডিপোর জন্য জমি-সমস্যা মিটে যাওয়ার পর কাজের গতি অনেকটাই বেড়েছে। ডিপোর জমি সংক্রান্ত জটের সময়ই আরভিএনএল-এর কলকাতার দায়িত্বে থাকা রাজেশ প্রসাদ বলেছিলেন, ‘জট কেটে গেলে কাজের গতি অনেকটাই বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।’ জমির জট কেটেছে। বেড়েছে কাজের গতিও।
মাঝেরহাট ব্রিজের কিছুটা আগেই তিনটি পিলার তৈরীর কাজ এখনও বাকি। এই কাজ শেষ হয়ে গেলে জোকা থেকে মাঝারহাট পর্যন্ত ভায়াডাক্ট তৈরীর কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরভিএনএল-সূত্রে জানা গিয়েছে, জোকা ডিপোর জন্য পাওয়ার সাব-স্টেশন তৈরী করে দেওয়ার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে ডব্লিউবিএসইডিসিএল এবং সিইএসসি-কে।
জোকা-বিবাদী বাগ রুটে যে ১৪টি স্টেশন রয়েছে তার মধ্যে মোমিনপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত অংশ ভূগর্ভস্থ। এই অংশে কী ভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সেই বিষয়ে কোন কোন পরামর্শদাতা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হবে সেটাও ঠিক হয়ে গিয়েছে।
নোয়াপাড়া – বারাসাত
দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে চালু হয়েছে বিমানবন্দরে মেট্রোরেলের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। কলকাতা মেট্রোর নোয়াপাড়া-বারাসত রুট বা লাইন-৪ নির্মাণের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে আশাজনক অগ্রগতি বলে মনে করছেন নির্মাণকর্মীরা।
বিমানবন্দর থেকে তৈরী সুড়ঙ্গ যশোর রোডের নীচ দিয়ে নিউ ব্যারাকপুর স্টেশন পর্যন্ত যাবে। তার আগে নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অংশটি এলিভেটেড। নিউ ব্যারাকপুর থেকে বারাসত পর্যন্ত অংশটি ফের এলিভেটেড। বিমানবন্দরের মধ্যে বেশ কিছুটা অংশ ঘিরে পুরোদমে চলছে এই সুড়ঙ্গ তৈরীর কাজই।
অন্যদিকে, দমদম ক্যান্টনমেন্টে স্টেশন বিল্ডিং তৈরীর কাজ পুরো শেষ। গ্রাউন্ড ফ্লোরে তৈরী হয়েছে টিকিট কাউন্টার। কিন্তু, এই স্টেশনে এখনও পর্যন্ত ট্র্যাক পাতার কাজ শুরুই হয়নি। তার চেয়েও বড় কথা স্টেশন বিল্ডিংয়ের ঠিক বাইরেই পিলার নম্বর এপি ১৭৪ ও এপি ১৭৫-এর মধ্যে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ পুরোটাই বাকি।