গাছের ছায়ায় সবুজ নিউ আলিপুর কলেজ
স্কুলে আমরা সকলে পড়েছি ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’। কিন্তু তা বইয়ের পাতাতেই থেকে গেছে। কার্যকরী পদক্ষেপ হয় কম। নিউ আলিপুর কলেজ অবশ্য সবুজের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে। কলেজ-অধ্যক্ষের উদ্যোগে কার্যত নজির তৈরি হয়েছে সেখানে।
কলেজ প্রাঙ্গণে সবুজায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে আরও একবার নিজেদের স্বতন্ত্র ভাবনার প্রমাণ রেখেছে এই মহাবিদ্যালয়। মূল ভবন সংলগ্ন কিছুটা জমি দক্ষিণ কলকাতার এই কলেজের সীমাকে বর্ধিত করেছে। সেই জমিটুকু ফেলে না রেখে সেখানে বাগান গড়ে তুলেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভবনের সামনের অংশে ছাত্রদের খেলার মাঠ ও মুক্ত মঞ্চের সীমানা ঘিরে গড়া হয়েছে স্থায়ী বাগান।
সেখানে আছে প্রাচীন কুল, জাম, ছাতিম-সহ কয়েকটি গাছ। বাগানের কলেবর বাড়াতে কেবল মালির ভরসায় থাকেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। উৎসাহী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে স্থায়ী এবং সক্রিয় কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁদের তত্ত্বাবধানে কলেজের পিছনের অংশেও মরসুমি ফুলের বাগান-সহ মূল ভবনের প্রতিটি তলায় সবুজায়নের নিয়মিত তদারকি চলে। কলেজ ক্যান্টিন, ছাত্র-সংসদের ঘর, অফিস, প্রশাসনিক কক্ষ, শিক্ষকদের ঘর থেকে ব্যালকনি — সবুজায়নের আওতা থেকে বাদ যায়নি কিছু।
কলেজের নিজস্ব গাছ থেকে পাওয়া আম, জাম এবং কাঁঠাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। এই শীতে যেমন কমলালেবু গাছে এসেছে অজস্র ফল। শীতের মরসুমি ফুলে রঙিন হয়ে আছে গোটা চত্বর।
পাশাপাশি কলেজের অন্য দিকের জমিতে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের নিয়মিত পরিচর্যায় গড়ে উঠেছে ঔষধি বৃক্ষের সংরক্ষিত বাগান। সেটি বহু দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান প্রজাতির গাছের সংগ্রহশালা বলে জানাচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘৃতকুমারী, ব্রাহ্মী, কালমেঘ, কেশুত, বাসক, অশ্বগন্ধা, তুলসি, হলদি, পাথরকুচি এবং হাড়জোড়ার মতো বহু ওষধির সংগ্রহে সমৃদ্ধ বাগানটি কলেজের অন্যতম সম্পদ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে মাশরুম চাষ। অপুষ্টির শিকার বা দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই মাশরুম ব্যবহার করাই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য।
এ সবের সঙ্গে নবতম সংযোজন ‘উল্লম্ব উদ্যান’ বা ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’। যা অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গীর পরিকল্পনাপ্রসূত। কলেজের একাধিক বিভাগ নিজেদের বিভাগীয় নানা অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে জারুল, শিমূল ও পলাশের মতো একাধিক বৃক্ষ রোপণ করেছে। কলেজে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলের তোড়ার পরিবর্তে গাছ দেওয়ার উদ্যোগও শুরু হয়েছে। সবুজ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত লালন-পালনের জন্য প্রতিটি বিভাগকে কলেজের নেচার কমিটির তরফে বছরে একটি করে গাছ উপহার দেওয়া হয়। প্রচার চালাচ্ছে নিজস্ব পত্রিকা ‘চিরহরিৎ’-ও।