বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

শিব ও উমার বিয়ের দিনটিই মহাশিবরাত্রি

February 21, 2020 | 2 min read

ভারতীয় ভাবনায় শিব হলেন দেবাদিদেব। ব্রহ্মা-বিষ্ণুর সঙ্গেই সমোচ্চারিত তাঁর নাম। এক দিকে মহাপ্রলয়ের দেবতা, অপর দিকে তিনি কল্যাণসুন্দর। পণ্ডিতদের মতে শিব হলেন প্রাগার্য সংস্কৃতির দেবতা। মহেঞ্জোদরোর একটি সিলে পশুপতির প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে। আবার বৈদিক রুদ্র ছিলেন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ঝঞ্ঝার দেবতা। পরে শিবের সঙ্গে এই রুদ্র সম্ভবত মিলেমিশে যান। শিবপত্নী উমা-পার্বতী। 

যুগ যুগ ধরে ভারতীয় দাম্পত্যের শ্রেষ্ঠ আদর্শ। গুপ্ত-পাল-সেন পর্বে উমা-মহেশ্বরের যুগ্মমূর্তি জনপ্রিয় ছিল। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এমন প্রস্তরমূর্তি অনেক পাওয়া গিয়েছে। বর্ধমান জেলার বিভিন্ন গ্রামে আজও হরগৌরীর প্রস্তরমূর্তি পূজিত হয়— যেমন কলিগ্রামে, মঙ্গলকোটের বনকাপাশি কিংবা কাটোয়ার বিকিহাট গ্রামে। আজও কুমারী মেয়েরা মনের মতো বরের কামনায় শিবপূজা করেন। শিব-পার্বতীর বিয়ের মূর্তিকে বৈবাহিক/ পাণিগ্রহণ/ কল্যাণসুন্দর মূর্তি বলা হয়।

শিবপুরাণ, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ প্রভৃতি পুরাণে, মহাকাব্যে, প্রাচীন সাহিত্যে শিবের গার্হস্থ্য জীবন বর্ণিত হয়েছে। শিবের গলায় মালা দিয়েছিলেন দক্ষকন্যা সতী। শিব-বিরোধী দক্ষ এক বার শিবহীন যজ্ঞের আয়োজন করলেন। সেখানে সতীর উপস্থিতিতে শিবের নিন্দা শুরু হল। সতী, পতির অপমানে যজ্ঞকুণ্ডে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। শিব এসে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নাচনে মেতে উঠলেন। সৃষ্টি বুঝি রসাতলে যায়।

বিষ্ণু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিলেন বৃহত্তর ভারতবর্ষে। তার পরে মহাদেব গভীর ধ্যানে ডুবে গেলেন। এ দিকে, সতী জন্ম নিলেন হিমালয়কন্যা উমা রূপে। স্বর্গরাজ্য তখন অসুর, দানবদের করতলে। তারকাসুরকে বধ করতে চাই শক্তিশালী দেবসেনাপতি। ব্রহ্মা বললেন, যেমন করেই হোক উমার সঙ্গে মহেশ্বরের বিবাহ দিতে হবে। তবেই জন্ম হবে কার্তিকের। দেবতাদের প্রচেষ্টায় গৌরীর তপস্যায় মদন ভস্মের পরেই হরগৌরীর পরিণয় সুসম্পন্ন হয়।

পুরাণ-লোকশ্রুতি অনুসারে শিব-গৌরীর বিয়ের স্থানটি উত্তরাখণ্ডে রুদ্রপ্রয়াগ জেলার ত্রিযুগীনারায়ণ গ্রামে। মন্দাকিনী ও শোনগঙ্গার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই পৌরাণিক জনপদটি ছিল হিমালয় রাজার রাজধানী। এই বিবাহ দিয়েছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা। আর নারায়ণ গৌরীকে সমর্পণ করেন শিবের হাতে। চৈত্রে শিবগাজন উৎসব অনেকের মতে হর-কালীর বিয়ের অনুষ্ঠান। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, ‘‘শিবের গাজনের প্রকৃত ব্যাপার হর-কালীর বিবাহ। সন্ন্যাসীরা বরযাত্রী। তাহাদের গর্জন হেতু গাজন শব্দ আসিয়াছে। ধর্মের গাজনে মুক্তির সহিত ধর্মের বিবাহ হয়। দুই বিবাহ-ই প্রচ্ছন্ন।’’

তবে পৌরাণিক মতে, হরগৌরীর বিবাহ হয় শিবরাত্রির পুণ্যলগ্নে। অনেকেই বলেন, প্রতি কৃষ্ণপক্ষের চোদ্দোতম রাত্রিই শিবরাত্রি। কিন্তু ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চোদ্দোতম রাত্রি হল মহাশিবরাত্রি। এটিকে বছরের সবচেয়ে অন্ধকার রাত বলে মনে করা হয়। এই রাতেই মহাদেব গৌরীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দিন দেশের বহু শিবমন্দিরে হরগৌরীর বিবাহের অনুষ্ঠান হয়। বর্ধমান জেলায় শিবরাত্রিতে হরগৌরীর বিবাহ উৎসব না হলেও মেলা বসে এবং বিশেষ পুজো ও অনুষ্ঠান হয়।

শিবরাত্রি এমনই এক প্রাচীন ব্রতানুষ্ঠান। এই ব্রত মহিলাদের হলেও নারীপুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ করতে পারেন। আগের দিন ভাল করে স্নান করে শুচি হয়ে নিরামিষ খেতে হবে। পর দিন সকালে স্নান আহ্নিক করে বেলপাতা, দুধ, ঘি, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করার পালা। সারা দিন নিরম্বু উপবাসে থেকে রাতে চার প্রহরে চার বার যথাক্রমে দুধ, দই, ঘি, মধু দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে হবে। এ দিন গান বাজনা করে রাত জাগার বিধি রয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#shiv parvati, #Shivratri, #Maha Shiv Ratri

আরো দেখুন