পারফিউমের যুগেও আতরের সৌরভে মোহিত বাঙালি
সাড়ে চারশো বছর পার। রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, গিয়েছে। কিন্তু আতরের সেই সুগন্ধ ম্লান হয়নি এত টুকু।
গোলাপ, জুঁই, রজনীগন্ধা, বেলের মতো সুগন্ধি ফুল তামার পাত্রে গরম করে সেই ফুলের নির্যাস বের করে নেন এক ধরনের ওস্তাদ বা আতর প্রস্তুতকারক। ওই নির্যাস চন্দন তেলের সঙ্গে মিশিয়ে যা তৈরি করা হয়, তাতেই লুকিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আতরের সুগন্ধের রহস্য। আর সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়েই তৈরি হয় আতর। আবার অ্যালকোহল-সহ বিভিন্ন রাসায়নিকের সঙ্গে নানা ধরনের ফুলের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি করা হয় পারফিউম।
আতরের ১০ গ্রামের দাম ৩০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা, এমনকী তার বেশিও হতে পারে। রাসায়নিকের অনুপস্থিতি এবং সুগন্ধের স্থায়িত্বই আতরের এমন চড়া মূল্যের প্রধান কারণ। সুগন্ধ ভেদে আতরের কতই না নাম। কারও পছন্দ ‘নাজুম’, তো কেউ ‘জন্নত-উল-ফিরদৌসের’ প্রেমে মোহিত। কারও বা বাধা ব্র্যান্ড ‘শাহ-ই-ইরান’।
পারফিউম, ডিও স্প্রের রমরমা বাজারে এখনও মাথা উঁচু করেই অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রেখেছে আতর। আতর ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুরোনো প্রজন্মের একটা বড় অংশ তো বটেই, এমনকী নতুন প্রজন্মের অনেকেও সংগ্রহে রাখতে চান পছন্দসই আতর।
কারও মতে পুরোদস্তুর দেশি পোশাকের সঙ্গে বিলাতি সুগন্ধির বদলে আতরই বেশি খাপ খায়। কেউ বলছেন, পারফিউম বা ডিও ব্যবহার করা হয় ঘামের দুর্গন্ধ ঢাকা দিতে। কিন্তু আতর ব্যবহার করা হয় জামা-কাপড়কে সুগন্ধি করতে। আবার অনেকের কাছে হরেক নকশার আতরের শিশিও সংগ্রহযোগ্য বস্তু।
ইদানীং বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা বা পুরোনো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চল শুরু হয়েছে। তাই, নতুন প্রজন্মেরও অনেকে আতর ব্যবহার করছেন।