রূপসী বাংলা: ঘুরে আসুন অফবিট বাংলাদেশ
বাংলাদেশ, নামটা শুনলেই শিহরণ জাগে অনেকের মনে। পড়ন্ত বিকেলে পদ্মার জলের ঝকমকি, পাতে ইলিশ-চিতলের মুইঠ্যা… আহা! ঘুরে আসবেন ভাবছেন? জেনে নিন কীভাবে?
এখন তো দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। উড়োজাহাজে যাওয়ার দরকার নেই। ট্রেনে করে চলে যান বাংলাদেশে। সাধ্যের মধ্যে আরামে পৌঁছে যাবেন।
মৈত্রী এক্সপ্রেস
কলকাতা থেকে ঢাকা যায় মৈত্রী এক্সপ্রেস, সপ্তাহে ৪ দিন। সোমবার, মঙ্গলবার , শুক্রবার ও শনিবার। কলকাতা চিৎপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৭:১০ সময় আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায় বিকাল ৪:০৫ সময়ে।
এসি কেবিনের প্রতি সিট, ২০১৫ টাকা, এসি চেয়ার, ১৩৪৫ টাকা। শিশুদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্ট। সিঙ্গল কেবিনে ৩টি সিট, এবং ডাবল কেবিনে ৬ টি সিটের টিকিট দেয়া হয়।
টিকিট সংগ্রহের পদ্ধতি
কলকাতা টু ঢাকার টিকিট কাটতে হবে ডালহৌসির ‘ফেয়ারলি প্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং’ অথবা চিৎপুরের ‘কলকাতা টার্মিনাল’ স্টেশনে গিয়ে। কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের টিকিট আর কোথাও বিক্রি হয় না।
ফেয়ারলি প্লেসে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়। আর কলকাতা স্টেশনে টিকিট দেয়া হয় বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত স্টেশনের দ্বিতীয় তলায়।
বন্ধন এক্সপ্রেস
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৫২ বছর পর সেই ট্রেনই সে পথেই নতুন রূপে চালু করা হয়েছে। আর এই ট্রেনের নাম রাখা হয়ে ‘বন্ধন’। প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত খুলনা-কলকাতা রুটে এই ট্রেনটি চলাচল করে। বন্ধন এক্সপ্রেসে কলকাতার থেকে খুলনা যাওয়ার ট্রেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থের ভাড়া হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের ভাড়া এক হাজার টাকা।
যেখানে যেখানে ঘুরবেন
কুয়াকাটা: একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যাবে কুয়াকাটায়। খুলনা থেকে কুয়াকাটা যাওয়াটা বেশ সহজ। ঢাকা থেকে যাওয়া জটিল। বাংলাদেশে ভ্রমণে কুয়াকাটা থেকে শুরু করতে চাইলে বন্ধন এক্সপ্রেসে খুলনা আসা ভালো। খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭টায় বিআরটিসি বাস ছাড়ে। বাস ভাড়া ২৭০টাকা। যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা। বিভিন্ন ধরনের হোটেল আছে কুয়াকাটায়। হোটেলগুলোর ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
কক্সবাজার: পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এখানে শীত মৌসুমে ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়। তবে সব ঋতুতেই ভ্রমণ করা যায়। কিন্তু বর্ষাকাল এড়িয়ে ভ্রমণ করা উচিত। আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তবে প্রথমে ট্রেনে চট্টগ্রাম, এর পর বাসে করে কক্সবাজার। যাতায়তে এর চেয়ে কম খরচ আর হবে না। এরপর ঘোরাঘুরি। কক্সবাজার শহরে ঘোরাঘুরিতে বেশি খরচ পরবে না, টমটমে করে শহরের যে প্রান্তেই যান না কেন ২০-৩০ টাকা ভাড়ার বেশি নয়।
সাধারণত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কক্সবাজারে সিজন বলা হয়ে থাকে, তাই এই সময়ে সবকিছুর দাম একটু বেশিই থাকে।
চুয়াডাঙা: ভারতের স্বাধীনতার আগে, বাংলাদেশের কার্পাসডাঙায় এক মাটির বাড়িতে এসে বেশ কিছুদিন ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কথিত আছে, তিনি নাকি এই বাড়িতে বসেই তাঁর বিখ্যাত ‘লিচুচোর’ কবিতাটি লিখেছিলেন। এর একটু দূরেই কুলকুল করে বয়ে চলেছে ভৈরব নদী। শোনা যায়, এই নদীর কূলে বসে কবি নজরুল কিছু গান লিখেছিলেন। বাংলাদেশের বাস সার্ভিস খুব ভাল, আর বাসের সংখ্যাও অনেক। কার্পাসডাঙা গির্জা দেখার মতো।
লালন শাহ সেতু: বাংলাদেশের বিখ্যাত নদী পদ্মা। পদ্মার রূপ অবর্ণনীয়। পদ্মার ইলিশ জগৎবিখ্যাত। পদ্মা নদীর ওপর পাশাপাশি আছে লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। দু’টি সেতুই দারুণ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের বৃহত্তম রেল সেতু। হার্ডিঞ্জ সাহেবের নামে এর নামকরণ হয়েছিল। সেতুটির বয়স একশো বছরেরও বেশি।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি: কুঠিবাড়িটি দোতলা। একপাশে রয়েছে একটি পুষ্করিণী। সেই পুষ্করিণীর এক কোণে রয়েছে একটি বজরা। এই বজরাতে চড়ে কবিগুরু ভ্রমণ করতেন। এখানকার বাড়ির প্রত্যেকটি দেওয়ালে সাজানো রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছবি। এখানে তাঁর ব্যবহৃত পালঙ্ক, টেবিল, রান্নাঘর প্রভৃতিও রয়েছে।
লালন শাহের মাজার: এই মাজার অবস্থিত কুষ্টিয়া জেলায়। ওখানে রাস্তার দু’ধারে শুধু সারি সারি রাইস মিল। এত রাইস মিল একজায়গায় চট করে দেখতে পাওয়া যায় না। মাজারের প্রবেশদ্বার বিরাট উঁচু। এখানে বিখ্যাত বাউল লালন শাহের সমাধি রয়েছে। তাঁর সমাধি সৌধ দ্যাখার মতো। লালন শাহের সমাধির আশপাশে রয়েছে তাঁর সঙ্গীসাথী বাউল -ফকিরদের সমাধি। এখানে একটি বড় অডিটোরিয়াম রয়েছে। এই অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল-ফকিররা এসে সংগীত পরিবেশন করে থাকেন। রয়েছে অ্যাকাডেমিক ভবন। এই ভবনের লালন মিউজিয়াম অসাধারণ।
পাবনা: বাংলাদেশের পাবনা একটি বড় সাজানো-গোছানো শহর। পাবনাতে চার্চ, ব্রিটিশ আমলের সংশোধনাগার, মসজিদ-বাড়িও দেখার মতো। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থাও ভাল। পাবনার দই ও বগুড়ার সর পড়া দই বিখ্যাত। এই দুই ধরনের দই খাওয়া সৌভাগ্যের। স্বাদ এককথায় অপূর্ব। পাবনা শহরে আছে বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এই বাড়ি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালাতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে এই সংগ্রহশালা।
একটা পুরো দেশের সমস্ত পর্যটন স্থলের হদিশ দেওয়া একটা প্রবন্ধে সম্ভব নয়। তাই চেষ্টাও করব না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভ্রমণের আরও কিস্তি হাজির করবে টিম দৃষ্টিভঙ্গি।