রক্তদান জীবনদান – রক্ত দেওয়ার আগে জেনে নিন এই তথ্যগুলি
রক্তদান নিঃসন্দেহে পুণ্যের কাজ! কয়েক ফোঁটা রক্ত পেলেই বেঁচে যায় মুমূর্ষু-প্রাণ৷ তাই অবশ্যই রক্ত দিন৷ কিন্তু রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার সময় সামান্য ভুলচুকে নষ্ট হতে পারে জীবন৷ বিপদে পড়তে পারেন দাতা-গ্রহীতা দুজনেই!
রক্তের গ্রুপ মোট ৮ ধরণের: এবি পজিটিভ, এবি নেগেটিভ, এ পজিটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজিটিভ, বি নেগেটিভ, এবং ও পজিটিভ, ও নেগেটিভ।
রক্ত নেওয়ার আগে কী কী দেখবেন?
• গ্রহীতার সঙ্গে দাতার রক্তের গ্রুপের অবশ্যই মিল থাকতে হবে৷
•কোনও রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের কম্পোসিটের মিল হওয়াও অত্যন্ত জরুরি৷
• কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তের নম্বর খেয়াল রাখতে হবে৷ অর্থাৎ, কবে সেই রক্তটি নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টিও খুঁটিয়ে দেখা উচিত৷ পাশাপাশি, ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই রক্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি৷ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই রক্ত নিলে রোগীর শরীরে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে৷
•রক্তের উপাদানের রূপ অর্থাৎ কম্পোনেন্ট ফর্মও ভাল করে দেখে নিয়ে তবে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে হবে৷
•এক জায়গা থেকে অন্যত্র রক্ত নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়৷ সাধারণ ২০-৬০ তাপমাত্রায় রক্ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া উচিত৷
ব্লাড ডোনার কী রকম হওয়া বাঞ্ছনীয়:
•দাতার অবশ্যই শরীর সুস্থ থাকা উচিত৷ অর্থাৎ কোনও বিশেষ শারীরিক সমস্যায় ভুগলে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ সেক্ষেত্রে দাতার নিজেরই শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে৷ পাশাপাশি অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণও দেখা দিতে পারে৷
• ১৮ বছরের আগে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ তবে ১৬-১৭ বছরে রক্ত দিতে চাইলে অভিভাবকদের অনুমতি এবং সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থা বিচার করে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত দেওয়া যেতে পারে৷
•বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী দাতার ওজন সঠিক হওয়া উচিত৷
• রক্ত দেওয়ার আগে সম্পূর্ণ মেডিক্যাল চেকআপ করানো উচিত৷ দাতার রক্ত গ্রহীতার শরীরে প্রবেশ করলে তা নিরাপদ হবে কি না তা যাচাই করতে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিসের মতো বেশ কিছু টেস্ট করা হয়৷ এর ফলে দাতার শরীর থেকে গ্রহীতার শরীরে রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রোধ করা যায়।
•রক্ত দেওয়ার আগে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চেক করিয়ে নিন৷ তাহলে রক্ত দেওয়ার পর রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হবে না৷ একই সঙ্গে নাড়ির স্পন্দন (পালস), ব্লাড প্রেশার এবং দেহের তাপমাত্রা চেক করতে হবে৷
• ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত না দেওয়ার জন্যই ডাক্তাররা পরামর্শ দেন৷
রক্ত দেওয়ার আগে:
•আয়রনযুক্ত খাবার খান৷ এতে রক্ত দেওয়ার পর কোনও শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে৷
শস্যজাতীয় খাদ্য, মাছ, পোলট্রি ডিম, সোয়াবিন খাওয়া ভাল৷ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে৷ ফলের রস, আমলকি, পেয়ারা নিয়মিত খেতে হবে৷
• নির্দিষ্ট পরিমাণ জল বা ফলের রস খাওয়াও অত্যন্ত জরুরি৷
•রক্ত দেওয়ার আগের রাতে যথাযথ ভাবে ঘুমানো জরুরি৷
• খালি পেটে রক্ত দেওয়া উচিত নয়৷ আবার খুব বেশি ভরা পেটেও রক্ত দিতে আসা ঠিক নয়৷ রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে রক্তদাতার ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়৷
•রক্ত দেওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান করা উচিত নয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যালকোহল খাওয়াও ঠিক নয়৷ একইসঙ্গে রক্ত দেওয়ার আগে চুইংগাম, ক্যান্ডি বা মিন্ট জাতীয় কিছু না খাওয়াই উচিত। কারণ এগুলি মুখের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়৷
কতদিন অন্তর রক্ত দেওয়া যেতে পারে?
একবার রক্ত দেওয়ার পর অন্তত আট সপ্তাহ (৫৬ দিন) বাদে ফের রক্তদান করা যায়৷ ডবল রেড সেল ডোনেশনের মধ্যে ১৬ সপ্তাহ (১১২ দিন) অপেক্ষা করা উচিত৷