বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

পঞ্চাশ বছরে পা দিল নন্টে ফন্টে

March 4, 2020 | 2 min read

বাংলা কমিকসের জগতে নারায়ণ দেবনাথ এক মহীরূহ। পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশী কমিকস স্ট্রিপ বানিয়েছেন তিনি। ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে-ফন্টে’, ‘কৌশিক রায়’, ‘বাহাদুর বেড়াল’-এর মতো একের পর এক সিরিজের জন্ম দিয়েছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালীর শৈশব-কৈশোরকে মাতিয়ে রেখেছে। 

১৯৬২ সালে ‘শুকতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় হাঁদা এবং ভোঁদাকে নিয়ে তাঁর কমিকস স্ট্রিপ। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই খানিকটা লরেল এবং হার্ডির ধাঁচে গড়া এই চরিত্র দু’টিকে আপন করে নেয় বাঙালী। ১৯৬৫ সাল থেকে তাঁর আরেক বিখ্যাত চরিত্র ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর যাত্রা শুরু হয়, যাকে বলা যেতে পারে বাংলার একমাত্র অতিমানব। যদিও নারায়ণ দেবনাথ শুরুর দিকে বাঁটুলের কোনো অতিমানবিক শক্তি দেননি। তাঁর সৃষ্টি করা আরেক জনপ্রিয় কমিকস স্ট্রিপ সিরিজ ‘নন্টে-ফন্টে’ এবার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করল।

১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় ‘নন্টে-ফন্টে’-র আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ইতিমধ্যেই সবার মন জিতে নেওয়া দুই চরিত্র হাঁদা এবং ভোঁদার আদলেই নন্টে এবং ফন্টেকে গড়ে তুলেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। তিনি ১৯৭২ সালে ‘পরিবর্তন’ নামের একটি বই অলংকরণ করেছিলেন। মনোরঞ্জন ঘোষের লেখা এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫০ সালে। সেটির থেকে বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। বইটি পুনর্মুদ্রণের সময়ে অলংকরণ করতে গিয়ে তিনি সেখানে পান কয়েকটি ছেলের হোস্টেল জীবনের গল্প। এরপর থেকে তাঁর কমিকসেও নন্টে আর ফন্টের হোস্টেলবাস শুরু হয়, এসে যায় সুপারিনটেনডেন্ট স্যার হাতিরাম পাতি, দুষ্টু ছাত্র কেল্টুরাম, রাঁধুনির মতো চরিত্ররা। 

‘নন্টে-ফন্টে’ সিরিজের কমিকসে দেখা যায়, নন্টে আর ফন্টে কোনো এক মফসসলের স্কুল হোস্টেলে থাকে। দু’জনে সহপাঠী এবং অভিন্নহৃদয় বন্ধু। কেল্টুরাম এই দু’জনের থেকে বয়সে বড়ো। অন্য ছাত্রদের মতো সে হাফ প্যান্ট পরে না, ফুল প্যান্ট পরিধান করে। অল্পবয়সী ছাত্রদের দিয়ে নিজের কাজকর্ম করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, কখনও ভয় দেখায়, কখনও বা অন্যভাবে কাজ হাসিলের পরিকল্পনা করে। তবে, নন্টে আর ফন্টের কাছে বারবার জব্দ হয়। কেল্টু সব সময়ে বিশালবপু, খাদ্যরসিক সুপারিনটেনডেন্ট স্যারের সুনজরে থাকার চেষ্টা করে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই স্যারের প্রহারই তার ভাগ্যে জোটে। কমিকস স্ট্রিপে ল্যাংচা, বোঁচার মতো আরও বেশ কিছু চরিত্রের নাম পাওয়া যায়।

১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বই হয়ে পাঠকের হাতে আসে ‘নন্টে-ফন্টে’-র কমিকস। প্রথম দিকে সাদাকালো কমিকস থাকত, পরে কম্পিউটারের জাদুতে রঙিন কমিকস প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি অ্যানিমেটেড ভিডিও সিরিজ। পঞ্চাশ বছরও পেরিয়ে গেলেও, একইভাবে কচিকাঁচাদের মনোরঞ্জন করছে ‘নন্টে-ফন্টে’। 

শুধু কঁচিকাচা বললে ভুল হবে, বড়োরাও এই কমিকস পড়ে একই রকম মজা পান, উপভোগ করেন। ফেলে আসা শৈশবকে তাঁরা খুঁজে পান এই কমিকসে। এমন এক নির্মল ছাত্রজীবনের গল্প বলা থাকে এই সিরিজে, যেখানে মোবাইল ফোন নেই, কেরিয়ারের জন্য ইঁদুর দৌড় নেই – নন্টে-ফন্টের হোস্টেল যেন এক রূপকথা। তেমন মিষ্টি কৈশোর এখনকার ছেলেমেয়েরা আর পাবে না, ‘নন্টে-ফন্টে’-র কমিকস তাই চিরকালীন হয়ে থাকবে বাঙালীর জীবনে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengali, #NarayanDebnath, #nontefonte, #comedybangla, #Comics

আরো দেখুন