মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল আমরা
ঋতুস্রাব সম্পর্কিত সামাজিক নিয়মগুলি কিভাবে মেয়েদের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে এবং তাদের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে এই বিষয়ে অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘পিরিয়ড’ গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর এর প্রস্তাবিত সমাধান হল স্যানিটারি প্যাড।
এই স্যানিটারি প্যাডের প্রস্তাবনা নতুন নয়। স্যানেটারি প্যাড ব্যবহারের সচেতনার প্রচারে ‘প্যাডম্যান’ সিনেমাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্য সম্মত সামগ্রী ব্যবহার করা প্রয়োজন – স্যানিটারি প্যাডই হোক বা পরিস্কার কোন কাপড়।
জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ মহিলা এই সময় স্বাস্থ্য সম্মত বিধি মেনে চলে (বেশির ভাগটাই স্যানিটারি প্যাড)। যা কিনা ২০১০-এর তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। নিঃসন্দেহে এটি ভারতে গত কয়েক বছর ধরে ঋতুস্রাবের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনার (এমএইচএম) ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার ফলাফল।
মহিলাদের আয়ের ব্যবস্থা করতে স্যানিটারি প্যাড উত্পাদন ইউনিটগুলিকে স্বল্প ব্যয়ের প্যাডগুলি আরও সহজলভ্য করার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং নিয়মিত স্যানিটারি প্যাডগুলির গুণমান, স্বাস্থ্য বা পরিবেশগতভাবে ঠিক রাখতে উদ্যোক্তারা, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের প্যাড, মেন্সটুরাল কাপ এবং “পরিবেশ বান্ধব” বা কম্পোস্টেবল স্যানিটারি প্যাড জাতীয় বিভিন্ন পণ্য তৈরী করেছেন। ভারতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছে।
এই ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে
১। সব স্যানিটারি প্যাড কি ভালো মানের?
ডিসপোজেবল স্যানিটারি প্যাডগুলির মান নির্ধারণ করে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস; তবে এগুলি প্রয়োগ করা হয় না। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন স্যানিটারি প্যাডগুলির পার্থক্য থাকে। খারাপ মানের প্যাডগুলি প্রতিশ্রুতি মাফিক সুরক্ষা প্রদান করে না। এগুলি কতটা স্বাস্থ্য সম্মত সে বিষয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
২। সব মহিলাদেরই কি এ বিষয়ে সঠিক ধারণা বা সচেতনা আছে?
এর উত্তর এককথায় না। এই ক্ষেত্রে ইনফরমড চয়েজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্যানিটারি প্যাড ছাড়াও অন্য স্বাস্থ্য সম্মত বিকল্প ব্যবহার সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হতে হবে মেয়েদের। যেমন ঘরোয়া কাপড় কিভাবে একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি।
৩। প্যাডগুলিকে ব্যবহারের পর কি করা হয়?
প্রায়ই আমরা মহিলাদের মধ্যে ব্যবহৃত প্যাড আবার অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ব্যবহার করার প্রবনতা দেখি। প্রস্তাবিত সময়ের বাইরে প্যাড ব্যবহার করেন অনেকেই। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং তার গুরুতর স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই বর্জ্যটি নিরাপদে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য সম্মত কোন সমাধান নেই আমাদের কাছে। তার ফলে এই বর্জ্য মহিলাদের এবং পরিবেশের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। গবেষণায় দেখা যায় যে প্যাডগুলি সাধারণত উন্মুক্ত জায়গায় এবং জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়। বাথরুমের ডাস্টবিনে ফেলা প্যাডগুলিকে পুড়িয়ে ফেলা হয় অদক্ষ উপায়ে। এক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রন বোর্ডের দ্বারা নির্ধারিত কোন নিয়মই মানা হয় না। এর ফলে পরিবেশে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
তাই, মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। আর সেই কারণে সামাজিক কুসংস্কার আমাদের দূর করতে হবে।