কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

করোনা নিয়ে গুজবে কান দেবেন না

March 18, 2020 | 2 min read

অবশেষে তিনি এলেন। লন্ডন থেকে করোনাভাইরাস এসে হাজির হল আমাদের শহর কলকাতায়। সরকারিভাবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল জানিয়েছে, কলকাতায় প্রথম একজনের দেহে করোনাভাইরাস মিলেছে।

এই মুহূর্তে দুটো বিষয় খুব জরুরি। এক, আতঙ্ক না ছড়ানো। দুই, অবৈজ্ঞানিক কাজ থেকে দূরে থাকা। আসুন, জেনে নিই সেরকমই কিছু তত্ত্ব ও তথ্য।

১. তত্ত্বঃ করোনাভাইরাস গরমকালে ছড়ায় না, ভারত গরমের দেশ বলে কোনও চাপ নেই।

  • তথ্যঃ এখনও অবধি সেরকম কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা WHO খুব পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছে, যে কোনও রকম অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে, জলবায়ুর কোনও প্রভাব প্রমাণিত নয়।

২. তত্ত্বঃ ঘনঘন গার্গল করলে করোনাভাইরাস রুখে দেওয়া সম্ভব।

  • তথ্যঃ সেরকম কোনও প্রমাণ এখনও অবধি মেলেনি। গলায় ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে বা গলা খুসখুস করলে নুনজলে গার্গল করলে কাজ দেয়, কিন্তু করোনাভাইরাস কোনোরকম নুনজলকে পরোয়া করে না।

৩. তত্ত্বঃ হলুদ-গোলা জল, মেথির জল, ব্লিচ, রসুন, পুদিনাপাতার জল, থানকুনি, কুলেখাড়া ইত্যাদি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক।

  • তথ্যঃ একেবারেই নয়। এইরকম কোনও কিছুই করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারে না। বরং অধিক সেবনে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪. তত্ত্বঃ যে কোনও মাস্ক পরলেই আপনি সেফ।

  • তথ্যঃ একেবারেই তা নয়। বিশেষভাবে ল্যাবে বানানো বা ক্লিনিক্যালি ব্যবহৃত এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক ছাড়া কোনও কিছুতেই করোনাভাইরাস আটকানো সম্ভব নয়। বরং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, মামুলি মাস্ক ব্যবহার করলে সেই মাস্ক থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে, যা রীতিমত বিপজ্জনক। শুধুমাত্র আক্রান্ত হলে বা করোনাভাইরাস কনফার্ম হলে তবেই মাস্ক ব্যবহার করুন।

৫. তত্ত্বঃ গরমজলে স্নান করলে করোনাভাইরাসের ভয় নেই।

  • তথ্যঃ এমন কোনও তথ্য নেই। WHO ঘনঘন গরম জলে স্নান করতে বারণ করেছে। তাতে উলটে ক্ষতি হতে পারে।

৬. তত্ত্বঃ এয়ারপোর্টে থার্মাল স্ক্যানারে ধরা না পড়লে আপনি বেঁচে গেলেন।

  • তথ্যঃ একেবারেই তা নয়। খুব ভাল করে জেনে নিন। প্রতিটি ভাইরাসেরই তার হোস্টে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মানব শরীরে ঢোকার পর একটা ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে। যে সময় তার লক্ষণ ধরা পড়ে না, কিন্তু তার কাজ চলতে থাকে। ফলে আপনার আজ জ্বর নেই মানে এই নয় যে কাল জ্বর হবে না বা শরীরের করোনাভাইরাস নেই। বরং সিম্পটমস দেখা দিতে ৩ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। পরিষ্কার WHO নির্দেশিকা রয়েছে। দয়া করে বাইরে ট্রাভেল করে ঘরে ফিরলে আগে কাছাকাছি হাসপাতালে যান। স্যাম্পল টেস্ট করান। এবং বাকিদের স্বার্থে ১৪ দিনের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ কোয়ারান্টাইন রাখবেন।

৭. তত্ত্বঃ করোনাভাইরাস অ্যান্টিবায়োটিকে সেরে যায়।

  • তথ্যঃ একেবারেই ভুল কথা। এখনও অবধি এর কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। এবং কোনও অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসে কাজ করে না। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার জন্য। ডাক্তার না দেখিয়ে কোনোভাবেই কোনও ওষুধ খাবেন না।

৮. তত্ত্বঃ কনস্পিরেসি থিওরিস্টরা তত্ত্ব নামিয়েছেন, করোনাভাইরাস নাকি কোনও গূঢ় উদ্দেশ্যে, বিশেষ কারণে তৈরি করা হয়েছে। রোমহর্ষক কোনও গল্প আছে।

  • তথ্যঃ পুরোপুরি আজগুবি কথা। এমন কিছুই জানা যায়নি। জুনসিস, অর্থাৎ পশুপাখি থেকে মানুষের ওপর ভাইরাস ছড়ানো একটি স্বাভাবিক বায়োলজিক্যাল প্রক্রিয়া।

৯. তত্ত্বঃ গোমুত্র, গোবর, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, পতঞ্জলি, চরণামৃত, বাবার প্রসাদ ইত্যাদিতে করোনাভাইরাস আটকে যেতে পারে।

  • তথ্যঃ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, আশা করি আপনি দুই পায়ে হাঁটেন এবং আপনার দুটো শিং নেই।

WHO, CDC, জনস হপকিন্স ও আরও যা যা সরকারি নির্দেশিকা আছে, কেবল সেগুলোই মেনে চলুন। গুজব ছড়াবেন না। শুধু পরিচ্ছন্ন থাকা, বারবার হাত ধোয়া, ময়লা পরিষ্কার করা, জমায়েত এড়িয়ে চলা, সামাজিক মেলামেশা যথাসম্ভব কম করা এবং সামান্যতম সন্দেহ হলেই কাছাকাছি ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যাওয়াই এর এক এবং একমাত্র ওষুধ। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে দূরত্ব বজায় রাখুন কিন্তু সংবেদনশীল ব্যবহার করুন, মনোবল বাড়াতে সাহায্য করুন।

আজ থেকে কলকাতার যুদ্ধ শুরু। এই যুদ্ধটা আমরা জিতব। জিতবই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #corona patient, #corona effect

আরো দেখুন