করোনা মোকাবিলায় কি স্বামী বিবেকানন্দের প্লেগ ইস্তেহার কাজে লাগবে?
১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ এক মহামারির আকার নিয়েছিল। সেই সময় স্বামী বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতা সহ আরও শিষ্যরা তৎক্ষণাৎ মানুষের সেবা শুরু করেন। উদ্ধারকার্য ছাড়াও স্বামীজি বাংলা ও হিন্দীতে ইস্তেহার ছাপিয়ে বিলি করেন যাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে এই রোগ থেকে সঠিক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করতে পারেন।
দেখা যাক সেই শতাব্দী প্রাচীন ইস্তেহারে কি লেখা ছিলঃ-
প্লেগ ইস্তেহার
ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণকে প্রণাম জানিয়ে
কলকাতাবাসী ভাইয়েরা
আপনারা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি, আপনারা দুঃখে থাকলে আমরাও দুঃখে থাকি। তাই এই অস্থিরতার সময় আমরা সবসময় আপনাদের জন্য লড়ছি ও প্রার্থনা করি যাতে আপনারা এই মহামারি থেকে রক্ষা পান।
এই রোগকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভয় পাচ্ছেন, এই রোগ থেকে আপনাদের বাঁচাতে যদি আমাদের জীবন যায় তাহলে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করবো কারণ আপনারা সকলেই ঈশ্বরের অংশ। যিনি ভগবানকে অস্বীকার করছেন, তিনি মহাপাপ করছেন। এনিয়ে কোনও সংশয় নেই।
আমরা আপনাদের অনুরোধ করবো কী আতঙ্কিত হবেন না। ভগবানে ভরসা রাখুন এবং শান্ত হয়ে ভাবুন এই মহামারি থেকে মুক্তির উপায়। নয়তো যারা এই কাজ করছেন, তাঁদের হাতে হাত মেলান।
ভয় পাওয়ার কি আছে? আজ জে প্লেগ মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। ভগবানের ইচ্ছেয় অন্যান্য জায়গার মতো প্লেগ কলকাতায় হয়নি। সরকারও আমাদের সাহায্য করছে। তাহলে ভয়ের কি আছে?
আসুন এই অহেতুক ভয় ত্যাগ করুন এবং ইশ্বরে আস্থা রাখুন এবং কাজে ফিরে যান। পরিষ্কার পরিছন্নভাবে জীবন কাটান। ঈশ্বরের কৃপায় সব ভয় কেটে যাবে।
ক. সবসময় বাড়ির ভেতর এবং চারপাশ, ঘর, কাপড়, বিছানা, নর্দমা পরিষ্কার রাখুন
খ. পচা বা, গন্ধ হয়ে যাওয়া খাবার খাবেন না, তাজা ও পুষ্টিকর খাবার খান। অসুস্থ শরীরে তাড়াতাড়ি রোগ হয়।
গ. মন ভালো রাখুন। সবাই একদিন মারা যাবে। কাপুরুষরা মরার আগে বার বার মরে।
ঘ. যিনি অসৎ উপায়ে এবং অন্যের ক্ষতি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাকে কখনো ভয় পিছু ছাড়ে না। তাই এই পরিস্থিতিতে সকলে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকুন।
ঙ. এই মহামারির সময়ে লোভ ও রাগ ত্যাগ করুন।
চ. গুজবে কান দেবেন না।
ছ. ব্রিটিশ সরকার কাউকে জোর করে টীকা দেবেনা, ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরই দেবে।
জ. কোনও রোগীর যত্নতে কোনও কসুর রাখা হবেনা আমাদের হাসপাতালে। সকল ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গের মানুষকে সমানভাবে দেখা হবে। বিত্তশালীদের পালিয়ে যেতে দিন। আমরা গরীব, গরীবদের সমস্যা বুঝি। এই বিশ্বজননীও অসহায়দের সাহায্য করেন। বিশ্ব মাতা আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন, ভয় পেও না, ভয় পেও না।
ভাইসব, যদি কেউ আপনার সাহায্যে এগিয়ে না আসে, আপনারা বেলুড় মঠে শ্রী ভগবান রামকৃষ্ণের সেবায়েতদের জানান। আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, সব করব। বিশ্ব মাতার কৃপায় আর্থিক সাহায্যও করবো।