বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ফাঁসির মঞ্চ, ফাঁসুড়ে ও একটি লেখা

March 20, 2020 | 2 min read

ফাঁসি একটা ভয়ঙ্কর বিষণ্ণ অনুভূতি! একটা জলজ্যান্ত মানুষের হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে দেওয়া। তার পর পরাতে হবে গলা অবধি নেমে আসা কালো টুপি। এর পর ফাঁসির দড়ি গলায় পরিয়ে পাটাতনের ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া। কপিকলের হ্যান্ডেল টানলেই লোকটা গর্তের মধ্যে চলে যাবে। ‘দম’ করে একটা আওয়াজ, তারপর সব শেষ।

ভারতবর্ষের বক্সার জেলে ফাঁসির দড়ি তৈরি হয়। ১৯৩০ সাল থেকে এটা চলে আসছে। সূর্য সেনের ফাঁসির দড়ি এখান থেকে এসেছিল এবং ক্ষুদিরাম বসুর বেলায় আসেনি। সূর্য সেনের ফাঁসি হয় ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৪ আর ক্ষুদিরামের ১১ অগস্ট, ১৯০৮। এই দড়িগুলো তৈরি করেন জেলের কয়েদিরাই। ফাঁসির দড়ি তৈরির মেশিনে জনা কয়েক মিলে এই কাজ করেন।

অর্থাৎ, কয়েদিদের তৈরি দড়িতেই অন্য কয়েদির ফাঁসি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ‘ফাঁসুড়ে’ বলে কোনও আলাদা পদ নেই। সেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে থাকা কয়েদিদেরই শিখিয়ে পড়িয়ে ফাঁসি দেওয়ানো হয়। এর জন্যে তাঁরা মেয়াদ খাটার ক্ষেত্রে কিছু ‘ছুট’ পান।

ফাঁসুড়ে মহাদেবের নাম এখন সরকারের ঘরের লিস্টে আছে। ১৯৮৭-তে তাঁর অর্ধেক হাতেখড়ি। ‘অর্ধেক’, কারণ ফাঁসিটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। গড়িয়াহাটের বণিক পরিবারের গৃহবধূ খুনের মামলার আসামি চন্দ্রনাথের ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েছিল, পরে রদ হয়।

চন্দ্রনাথ বণিকের ফাঁসি রদ হয়ে যাবার পর মহাদেব পরের কাজ পান ছ’বছর পর, ১৯৯৩-তে। জোড়া ফাঁসির কাজ। মালদহের কার্তিক শীল আর সুকুমার বর্মনের এক সঙ্গে ফাঁসি। এরা একসঙ্গে এক পরিবারের কয়েক জনকে খুন করেছিল।

সূর্য সেন এবং ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির সময় শিবলাল ছিলেন। ক্ষুদিরামকে চিনতেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে হাতল টানতে হয়নি। এক জন ইংরেজ টেনেছিলেন। তাঁকে ট্রেনিং দিয়েছিলেন শিবলাল। ফাঁসির দড়িটাও তৈরি করেছিলেন। সূর্য সেনকে প্রথমে চিনতে পারেননি। তাঁর গাল দাড়িতে ভরে গিয়েছিল। যখন কাছটায় যান, চিনতে পেরে বলে উঠেছিলেন, ‘না, আমি পারব না।’ মাস্টারদা বলেছিলেন, ‘তোমার কাজ তুমি করো।’

গালজ্বলা শিবলালের আমলের ফাঁসুড়ে। তাঁর আসল নাম যা-ই হোক, দুর্ঘটনায় গাল পুড়ে যাওয়ার জন্যে তাঁর এই নাম হয়েছিল। তিনি ফাঁসির কাজ করার সময়, থেকে থেকেই জ্বলা জায়গাটার ওপর হাত দিতেন আর বিড়বিড় করে কিছু বলতেন।

মাম্মু জল্লাদ ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন আফজল গুরু আর আজমল কসাবকে, তাঁর দাদু রামরাখের একটি ফাঁসি দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করতে। রামরাখ ভগৎ সিংহের ফাঁসি দিয়েছিলেন। তিনি ইন্দিরা গাঁধীর হত্যাকারী সতবন্ত সিংহ ও কেহর সিংহকে ফাঁসি দিয়ে নাকি খুশি হয়েছিলেন। কাল্লুরাম কুখ্যাত অপরাধীদ্বয় রঙ্গা-বিল্লারও ফাঁসি দিয়েছিলেন।

নাটা মল্লিক মোট পঁচিশটা ফাঁসি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার আগে কুড়িটা, পরে পাঁচটা। শেষ ফাঁসি দেওয়া ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে, ২০০৪ সালে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Hanging, #Nata Mallik, #khudiram, #Bhagat Singh, #Dhananjoy

আরো দেখুন