ডিজিটাল যুগে কবিতার ভাষা – কি বলছেন কবিরা
ডিজিটাল সময়ে আমরা বেঁচে আছি। মানুষ প্রথম লেখা শুরু করেছিল পাথরের গায়ে বা গাছের পাতায়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে আজ এমন একটা জায়গায় এসেছি যখন মানুষ আর হাতে লেখে না, যন্ত্রে লেখে।
সেটাকে কবিরা কিভাবে দেখছেন? তাদের সাথে কথা বললেন দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভজিত গুপ্ত
(উল্লেখযোগ্য কবিতা গ্রন্থঃ ঘুমন্ত লাটাই, ঘুমিয়ে পড়া পতাকা সংগ্রহ, কথাবার্তার বোবাছায়া, তোমাকেই দিদিমণি, নীলরঙের বেঁচে থাকা, পাখিদের আহিরভৈরিব প্রমুখ। সম্পাদিত পত্রিকাঃ, কবিসম্মেলন। সান্ধ্যভাষা।)
আমরা সুকুমারী ভট্টাচার্য সংখ্যা করেছিলাম, প্রনবেন্দ দাশগুপ্ত সংখ্যা করেছিলাম। সুদীপ চক্রবর্তী, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় সংখ্যা করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে বাংলা এখনও ভাবেনি। এটাই আজকের নিয়তি। এটাই আজকের যুগের স্বাক্ষর। আমি ব্যক্তিগতভাবে হাতে লেখা পছন্দ করি কারণ মেশিনের চুম্বনটা শুধু ঠোঁটে, শরীরে থাকে, অনুভূতি থাকেনা। আমার কাছে এটা এরকম মনে হয়। পরিস্থিতি মেনে নেওয়াটা নিয়তি। অস্তিত্বের প্রয়োজনে সকলকে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে।
শ্রীকান্তর একটা প্রবন্ধ আছে, কালি কলম মন, এর একটা অংশ এখন মাধ্যমিকেও পাঠ্য হয়েছে, তাতে পেনের সূচনা থেকে আরম্ভ করে কম্পিউটার আসার ফলে পুরো ব্যাপারটাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়, সঙ্গে আরও অনেক কিছু হারিয়ে যাওয়া, যারা লিপিকর ছিল, হারিয়ে গেল, যারা দলিল লিখত হারিয়ে গেল, বাঙালীর শেষ হাতে লেখা কাজে লাগানো মনে হয় দলিল লিখন, সেটাও হারিয়ে গেল, এটাকে নিতে হবে। যতটা সম্ভব লড়াই করা আর কি, নিজের মতন করে।
অভীক মজুমদার
(বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক। যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সিলেবাস কমিটির চেয়ারপার্সন।)
এই যে নতুন নতুন মাধ্যম আসছে, এগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসবেই। যে কবি, যার যেটা পোষায়, তাতে কারও আপত্তি নেই। আমার যেমন ডিজিটালে পোষায় না। এটা কবির নির্বাচন, ব্যক্তিগত বিষয়। খাগের কলমে লিখবে না ডট পেনে লিখবে, আমি জানি এর সঙ্গে সূক্ষ্ম একটা অর্থনীতির সম্পর্ক আছে, কিন্তু, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে কবি এর মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নেন। সমাজ পরিবর্তনের পথে এগোবে এবং তার সঙ্গে সময়কে, লেখককে, পাঠককে নিজের মত করে মোকাবিলা করতে হবে।
জয়ন্ত ভট্টাচার্য
(প্রকাশিত কবিতার বইঃ সোম। নানা নামী পত্রিকায় লিখেছেন ও সম্পাদনার কাজে জড়িয়ে থেকেছেন।)
যে কোনো মাধ্যম, যা কিছু নতুন আসে, তাকে আমরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে পারি না। এর ভালো খারাপ দুই দিকই আছে। এই মিডিয়ামে লোকে যেমন নিজের কবিতা প্রকাশ করতে পারছে, আবার ডিজিটাল ফটোগ্রাফির মত এটা প্রচুর প্রোডিউস করে, সেটাও একটা বিষয় আছে। আমি ডিজিটাল কোনও প্ল্যাটফর্মে নেই। ডিজিটাল মাধ্যমের কবিতা নিয়ে আমার কোনও ধারনা নেই। আমার এই নিয়ে আলাদা করে আহ্বান, বিসর্জন নেই। আমার সঙ্গে দূরত্ব আছে।