বিসমিল্লাহ্ খান – সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নজির
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে এই অমর শিল্পী ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনিই তৃতীয় যাঁরা ভারতরত্ন পদক পেয়েছেন।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব ছিলেন অত্যন্ত একজন ধার্মিক শিয়া মুসলমান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি তাঁর সমাজের থেকে বারংবার নিন্দিত হওয়ার পড়েও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেবী সরস্বতীর পূজো করতেন।
১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিসমিল্লাহ খান সাহেব তার অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সারা ভারতবর্ষকে।
তার যোগ্যতায় সানাই এবং ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব সমার্থবোধক হয়ে গেছে। ভারতীয় দূরদর্শনের ১৫ই অগাষ্টের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তার সানাই বাদন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছিল। দিল্লীর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর পরই ভারতীয় দূরদর্শন সানাইগুরুর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতো। পন্ডিত নেহেরুর সময় হতেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।
আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং-সহ পৃথিবীর প্রায় সকল রাজধানী শহরেই ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব তার সঙ্গীত প্রভা ছড়িয়েছেন।
এতো সুনাম এবং অর্জন সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন খান সাহেব। সবসময়ই ছিলেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। সাইকেল রিকশাই ছিল তার চলাচলের মূল বাহন। অত্যন্ত অন্তর্মুখী বিনম্র এই সঙ্গীত গুরু বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।
উল্লেখ্য সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাইয়ের অংশে সানাই বাজিয়েছিলেন। শক্তিমান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের জীবন এবং কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র সঙ্গ মিল সে মুলাকাত তৈরী করেন। এতে ওস্তাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব স্বাধীনতা উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।