কফিহাউসের আড্ডাটা আজ বন্ধ
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস উত্তর কলকাতার বইপাড়ার কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত একটি কফি হাউস বা রেঁস্তোরা। ঐতিহ্যবাহী ও বাঙালির আড্ডাস্থল এই কফিহাউস কলকাতার প্রাচীনতম। এটি ইন্ডিয়ান কফি হাউসের একটি স্থানীয় শাখা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোদিকে অবস্থিত কফি হাউসটি কলকাতার সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং এটি বুদ্ধিজীবিদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বহুকাল আগে থেকে।
ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের উদ্যোগে বাঙালি কফিসেবীদের জন্য সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউর কফি-হাউস খোলা হয় ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ আর তার কিছুদিন পরেই খোলা হয় কলেজ স্ট্রিটের কফি-হাউসটি। পরে, ১৯৫৭ সাল নাগাদ অ্যালবার্ট হল কফি-হাউস ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের আওতা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমিক সমব্যয়ের আওতায় আসে।
এই দুই কফি-হাউসই ছিল এককালের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান আড্ডাস্থল। নিকটতম বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলির ছাত্রছাত্রীদের ভিড় করা ছাড়াও নামিদামী বুদ্ধিজীবী – লেখক, সাহিত্যিক, গায়ক, রাজনীতিবিদ, পেশাদার, ব্যবসায়ী ও বিদেশি পর্যটকদের আড্ডা দেওয়ার অবারিত জায়গা হিসাবে এটি খ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরানো বইয়ের বাজার ও নতুন বইয়ের বাজার সামনে আছে বলে হাউসটিতে সব সময়েই ভিড় থাকে।
সংক্ষেপে এই কফি হাউসটি কলেজ স্ট্রিটের মর্মস্থলে অবস্থিত যেখানে প্রখ্যাত সব বুদ্ধিজীবিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক কাপ কফি নিয়ে আড্ডা জমান। পূর্বে অ্যালবার্ট হল নামে পরিচিত এই হলঘর বহু ঐতিহাসিক সভা বা জমায়েতের সাক্ষী।
দশকের পর দশক ধরে পরিষেবা দিয়ে যাওয়া কলকাতার এই ঐতিহ্যশালী আবেগের কফি হাউসকে হেরিটেজ তকমা দিল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (ইনট্যাক)। এই প্রথম ইনট্যাক কোনও খাবারের দোকানকে হেরিটেজ শিরোপা দিল। কারণ, এতদিন পর্যন্ত এই শিরোপা মূলত কোনও সরকারি বিল্ডিংকে দেওয়া হয়ে এসেছে।
এই ঐতিহাসিক কফি হাউসটি নানা ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও থেকেছে অবিচল। সেই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য আজ বন্ধ। কলকাতার লকডাউনে তালা ঝুললো এখানেও।