বাঙালির এককালে গরমের একমাত্র স্বস্তি- শীতলপাটি
তৎকালীন দিল্লীর নবাব ঔরঙ্গজেবের সাথে দেখা করতে যাবেন সুবে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। নবাবের সাথে দেখা করতে গেলে সওগাত নিয়ে যাওয়াই রেওয়াজ। কিন্তু মুর্শিদকুলি খাঁ জানতেন ঔরঙ্গজেব মুঘল সম্রাট হলেও খুব সাধারন জীবনযাপন করেন। তাই আড়ম্বরপূর্ণ উপঢৌকন তিনি নেবেন না। তাই অনেক ভেবে তিনি ঠিক করেন যে রূপালি বেতের শীতলপাটি নিয়ে যাবেন। করেনও তাই। শোনা যায় তাতে ঔরঙ্গজেব তা এতো পছন্দ হয় যে সারা জীবন শীতলপাটিতে বসেই নামাজ পড়েন।
মুঘল সম্রাট থেকে রাণী ভিক্টোরিয়া, এই শীতলপাটি মন কেড়েছে সবার। আটের দশক অবধি বাঙালির গরমের একমাত্র স্বস্তি ছিল এই শীতলপাটি বা মাদুর। কিন্তু ধীরে ধীরে দিন বদলেছে। শীতলপাটি-মাদুরের জায়গা নিয়েছে শতরঞ্চি, রঙিন চাদর। আগে যেই শীতলপাটি ছাড়া বিয়ে, আনন্দ উৎসব ছিল অপূর্ণ, আজ বাঙালি তার নামও ভুলতে বসেছে। তাছাড়া গরমে পাখা বা এসির সাথে পাল্লা দেওয়াও স্বম্ভব নয়। তাই আজ একপ্রকার নিষ্প্রয়োজনই হয়ে পড়েছে এককালের অতি আবশ্যক এই সামগ্রী।
শীতলপাটি কারীগরদের মতে এক একটা শীতলপাটি ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেখানে মাত্র ১০০ টাকাতেই প্লাস্টিকের মাদুর পাওয়া যায়। শীতলপাটি-মাদুরের কদর লোকে করবে কেন? তাদের দুঃখ যে আর নক্সা করা পাটি বানানো হয় না। নক্সা করা পাটির দাম ১০০০ টাকা থেকে শুরু। কিনবে কে?
এভাবেই বোধহয় হারিয়ে যায় সব ইতিহাস বহন করা সব শিল্প।