ভিড় সরাতে গিয়ে আক্রান্ত, মনোবল ভাঙছে পুলিসেরই
কলকাতায় লকডাউন অমান্যের খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে পুলিসকে। এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ নিচুতলার পুলিসকর্মীরা। বহু জায়গাতেই এনিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ আসছে, যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত পদস্থ কর্তারা। পুলিসকে মারধরের ঘটনায় রাজ্য পুলিস এলাকায় একাধিক জায়গায় কেস রুজু হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিসকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার হয়, সেজন্য শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ গিয়েছে।
লকডাউন না ভাঙার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পুলিস প্রচার চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছেন কর্তারাও। তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন ভেঙে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছেন বলে অভিযোগ আসছে বিভিন্ন থানায়। কোথাও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য সাধারণ মানুষ বেরিয়ে পড়ছেন। আবার কোথাও আড্ডা মারছেন এলাকার বাসিন্দারা। এই ধরনের খবর এলে এলাকায় যেতে হচ্ছে অফিসারদের।
কিন্তু, অধিকাংশ জায়গাতেই এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে পুলিসকে। লোকজন তাঁদের ঘিরে ধরেছেন। বাধ্য হয়ে জটলা না সরিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে কর্তব্যরত পুলিস কর্মীদের। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিসকে মারধর খেতে হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। জনতার মারে মাথা ফেটেছে, এমনকী তাদের সঙ্গে ডিউটিতে যাওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন।
পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ধরনের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি অভিযোগ হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। যার মধ্যে হাওড়া, বারাকপুর, মহেশতলা, বসিরহাট, বনগাঁ সহ বিভিন্ন জেলায় পুলিসের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অনেকটাই বেশি। মারধরের ঘটনায় থানা, ফাঁড়ি আলাদা মামলা রুজু করেছে, কিন্তু গ্রেপ্তারের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
এই ধরনের ঘটনায় নিচুতলার পুলিস কর্মীদের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, করোনার মতো একটি মহামারীর বিরুদ্ধে তাঁরা যেভাবে লড়াই করছেন, তারপর যদি তাঁরা আক্রান্ত হন, তাহলে কাজ করার মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে। নিচুতলার এই ক্ষোভের বিষয়টি কানে গিয়েছে শীর্ষকর্তাদের, তারপরই নড়েচড়ে বসেছেন তাঁরা। খোঁজখবর শুরু হয়েছে, কোথায় কোথায় পুলিস আক্রান্ত হয়েছে? এই ধরনের কেসের তদন্তের গতিপ্রকৃতি কী বা নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে কি না!
যদি বারবার আক্রমণের ঘটনা ঘটে, তাহলে এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে এবং গোলমাল বাড়বে। সেই কারণেই নির্দেশ হয়েছে — কোথাও পুলিস কর্মী আক্রান্ত হলে যেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং বাড়তি ফোর্স পাঠিয়ে এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুলিস নিজের হাতে রাখে।
তবে তা করতে গিয়ে পুলিস যেন বাড়াবাড়ি না করে ফেলে, সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।