মালদার গ্রামে হিন্দু বৃদ্ধকে কাঁধ দিলেন মুসলিম পড়শিরা
নজির তৈরি করল মালদার অখ্যাত গ্রাম লোয়াইটোলা। গ্রামে একমাত্র হিন্দু পরিবারের কর্তার মৃত্যুতে সৎকারের দায়িত্ব তুলে নিলেন মুসলিম প্রতিবেশীরা। এমনকি, মানবতার কাছে ধুয়ে গেল ধর্মীয় রং নয়, রাজনীতির লক্ষণরেখাও।
কালিয়াচক (২) নম্বর ব্লকে মোথাবাড়ি থানার পঞ্চানন্দপুর (১) গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক প্রত্যন্ত গ্রাম লোয়াইটোলা। মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামে একটি মাত্র হিন্দু পরিবারের বাস। সেই পরিবারের কর্তা বিনয় সাহা (৯০) বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাতে গত হন তিনি।
একদিকে করোনা নিয়ে আতঙ্ক, তার উপর লকডাউন চলছে। ফলে আত্মীয়দের ফোনে খবর দিতে পারলেও বাবার সৎকারে তাঁদের পৌঁছনো নিয়ে আতান্তরে পড়েন বৃদ্ধের দুই ছেলে কমল ও বিমল। কিন্তু বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি । খবরটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই মাঝরাতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। চলে আসেন পঞ্চায়েত প্রধান আস্কারা বিবি এবং তাঁর স্বামী মুকুল শেখ।
এরপর গ্রামের মুসলিম ছেলেরাই রাতে বাঁশ কেটে এনে শুরু করেন মাচা তৈরি। সেই মাচায় বিনয়বাবুর দুই ছেলের সঙ্গেই কাঁধ দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গঙ্গার ধারে সাকুল্লাপুর শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সৎকারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা।
বাবার সৎকার সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ায় স্বস্তি পাওয়া দুই ভাই বলেন, ‘গ্রামে আমরা বাদে বাকি সব ঘর ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম হলেও কোনও দিন নিজেদের সংখ্যালঘু মনে হয়নি। সবাই আমরা মিলেমিশে থাকি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর ওই রাত দুপুরে আমরাও সত্যি আতান্তরে পড়েছিলাম। শ্মশানটাও বেশ দূর। ভাবছিলাম আত্মীয়রা এসে না পৌঁছলে কিভাবে সৎকার হবে। প্রতিবেশীরা যে এই ভাবে এগিয়ে আসবেন সত্যি ভাবতে পারিনি। এখন বাবার মৃত্যুর বেদনার মাঝেও তাই একটা ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে। এভাবে সবাই থাকতে পারলে করোনার চ্যালেঞ্জও আমরা ঠিক জয় করতে পারব।’