ট্যাটু করানোর আগে জেনে নিন ইতিহাস
ফ্যাশন জগতে ট্যাটু বা উল্কি শব্দটি বহুল প্রচলিত। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী হোক বা ক্রিকেটার অনেককেই শরীরের বিভিন্ন স্থানে ট্যাটু করাতে দেখা যায় স্টাইলের অঙ্গ হিসেবে।
কম বয়সী অনেক যুবক-যুবতীদের অনেককে দেখা যায় হাতের ট্যাটু করে প্রেমিক বা প্রেমিকার নাম চিরস্থায়ীভাবে লিখে রাখতে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে। আবার অনেকে শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ট্যাটুর ব্যবহার করেন।
আমাদের দেশে কিন্তু নানা কারণে ট্যাটুর চল শুরু হয়। যেমন সামাজিক পদমর্যাদার চিহ্ন হিসেবে, আবার কখনও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ,কখনও বা ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ট্যাটুর ব্যবহার আমরা দেখতে পাই।
ট্যাটু বিশেষত বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল। অনুপ কুমার দত্তের লেখা “Tattoos- a tribal heritage” বইটা পড়লে জানা যায় যে কিভাবে বিভিন্ন আদিবাসী জাতির মধ্যে ট্যাটুর ব্যবহার ও প্রচলন ছিল।
অপহরণ রুখতে
অরুণাচল প্রদেশের আপাতানি আদিবাসীদের মধ্যে ট্যাটুর প্রচলন ছিল। আপাতানি সুন্দরী যুবতী আদিবাসী মেয়েদের মুখে ট্যাটু বানিয়ে মুখটা কুৎসিত করে দেওয়া হতো যাতে প্রতিবেশী নিশি আদিবাসী পুরুষরা সুন্দরী যুবতীদের অপহরণ করে নিয়ে না যায়।
শৌর্যের প্রতীক
যদিও ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে ট্যাটু প্রথার মধ্যে অনেক পরিবর্তন ও আধুনিকতা এসেছে কিন্তু আজও ট্যাটু করানোর মুখ্য উদ্দেশ্য পরাক্রম শৌর্যবীর্যের প্রতীক হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। আদিবাসীদের মধ্যে উল্কা বা ট্যাটু কখনও কখনও কোনও ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান বা পদমর্যাদাও নির্দেশ করত। আমরা এই ব্যাপারে আদিত্য আর্য ও বিভা যোশীর লেখা “The land of nagas” বইতে উল্লেখ পাই।
হেডহান্টার
নাগা উপজাতিদের মধ্যে যারা হেডহান্টারস ছিল তারা মুখে উল্কি বা ট্যাটু করে নিজেদের হেড হান্টার হিসেবে পরিচয় দিত। এই হেডহান্টারসরা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের মাথা কেটে নিয়ে আসতো ও নিজেদের বাড়ির কঞ্চির দেওয়ালের ঘরে বাঁশের ছুঁচালো ফলাতে মাথা গুলি গেঁথে রাখতো।
গোদনা
ছত্রিশগড়ের গন্ড উপজাতির মধ্যে ট্যাটুর প্রচলন এখনও আছে। এখানে ট্যাটুকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় গোদনা। শুধুমাত্র ভারতীয় আদিবাসীদের মধ্যে ট্যাটুর প্রচলন ছিল তা কিন্তু নয়, পুরো বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও উপজাতির মধ্যে এই ট্যাটুর প্রচলন দেখা যায়।
ট্যাটু করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ভাবনা-চিন্তা করে নেওয়া উচিত। তবে শরীরের জন্য ট্যাটু যতটাই ক্ষতিকর হোক না কেন ফ্যাশন জগতে কিন্তু ট্যাটুর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।