লকডাউন ধাপে ধাপে তোলার পক্ষেই সওয়াল বণিকসভার
তিন সপ্তাহের পরেও দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ারই সম্ভাবনা। অনেক দিন হল বন্ধ কলকারখানা। উপার্জন থমকে শ্রমিকদের। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের লক্ষ্মণরেখা মেনেই কিছু জরুরি পণ্যের উৎপাদনে ছাড় দিয়ে গরিবের নগদ রোজগারের রাস্তা খুলতে গতকালই উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নে শিল্প ও বণিকমহলের সঙ্গে বৈঠকে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনেই তিনি অক্সিজেন যোগাতে চেয়েছেন রাজ্যের অর্থনীতিতে। এমতাবস্থায় তাঁর দেখানো পথেই হেঁটে ধাপে ধাপে দেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে লকডাউন তোলার পক্ষে সওয়াল করল বণিকসভা ফিকি।
বণিকসভার তরফে দাবি করা হয়েছে, ২১ দিনের লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পরিবহণ থেকে কলকারখানা প্রায় সব কাজকর্ম। এই অভূতপূর্ব লকডাউনের ফলে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ৩৫.৩৪ হাজার কোটি টাকা! অর্থাৎ, লকডাউনের ২১ দিনের মেয়াদ শেষে ৭.৪৭ লক্ষ কোটি টাকার বিপুল ক্ষতির বোঝা বইতে হবে ভারতীয় অর্থনীতিকে। পাশাপাশি, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির তথ্য বলছে, ২৯ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারত্ব বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ২৩.৮ শতাংশে।
বণিকসভার মতে, এ হেন দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হলে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির বাহুল্য দেখাতে পারবে না ভারতীয় অর্থনীতি। তাই তাদের দাবি, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে, শ্রমিকদের ঠাঁই বদলের পথ বন্ধ রেখে আস্তে আস্তে দেশের সব ক্ষেত্র এবং পরিষেবায় ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে দেওয়াই এখন শ্রেয়। কী ভাবে এই লকডাউন তোলা হবে, সে সম্পর্কেও একটা রূপরেখাও দিয়েছে বণিকসভা। বলা হয়েছে, স্থানীয় ভাবে পণ্য কেনার নিয়ম শুরু, করোনা সংক্রমণ হয়নি এমন স্থানে লকডাউনের নিয়ম শিথিল করতে পারে প্রশাসন।
বণিকসভার তরফে আরও জানানো হয়েছে, দেশে কৃষির ভরা মরসুমে লকডাউনের জেরে থমকে গিয়েছে চাষের কাজ। সেক্ষেত্রে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরদেরকে নির্দেশ দিয়ে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকেই চাষের গতি ফেরানো হোক।
দেশে থমকে যাওয়া পরিস্থিতিকে সামাল দিতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহার করে ‘হোম ডেলিভারি’ আরও বেশি করে কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছে বণিকসভা। তাদের দাবি, এর ফলে বাজারে এবং লোকালয়ে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি জিনিষপত্রও সহজে দেশের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
দেশের ঘরোয়া ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থাগুলিই করোনার প্রকোপে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি করেছে বণিকসভা। তাদের স্বার্থে আগামী ছ’মাস অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদে বাকি সব পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক সাময়িক বাড়িয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা সংক্রমণ আটকাতে ২১ দিনের লকডাউনের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল থেকে আরও বাড়ানো হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত সম্ভবত শনিবারই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিয়ো মিটিংয়ে নেওয়া হবে। তবে, ওড়িশা এবং পাঞ্জাব ইতিমধ্যেই ওই দুই রাজ্যে লকডাউন এ মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে।