পুরুলিয়ায় বালকের মৃত্যুতে বিতর্ক, অনাহারে মৃত্যু নয় দাবি প্রশাসনের
লকডাউনে খাবার না-পেয়ে এক বালকের মৃত্যুর অভিযোগ শনিবার ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাস্থল পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের শাঁকড়া-খ গ্রাম। মৃত শেখ শাকিলের (১০) বাবা শেখ রহিমের দাবি, ‘‘ছেলেটা খালি পেটে বমি করে মারা গেল।’’
যদিও জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, মস্তিকের সমস্যার কারণে ওই বালকের মৃত্যু হয়েছে। অনাহারে সে মারা যায়নি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘পরিবারের সাত জনের রেশন কার্ড রয়েছে। তাঁরা রেশন পেয়েছেন। স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকেও পরিবারটি খাদ্যসামগ্রী পেয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এ দিন সকালে পাড়ায় খেলছিল শাকিল। হঠাৎ বাড়িতে এসে জল খাওয়ার পরে, দু’বার বমি করে জ্ঞান হারায়। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। ব্লক মেডিক্যাল অফিসার শেখ সানাউল্লা বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ জানতে বালকের দেহ মর্গে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিজনেরা জোর করে নিয়ে যান।’’ পরে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে পুরুলিয়ার মর্গে পাঠায়। ময়না-তদন্তও হয়।
শেখ রহিম দিনমজুর। ১০ সন্তান-সহ তাঁর পরিবারে ১৩ জন সদস্য। পড়শিদের একাংশের দাবি, ৩ এপ্রিল ব্লক অফিসের কাছে জিআর-এর (জেনারেল রিলিফ তথা ত্রাণসাহায্য) চাল ও গম দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন রহিম। স্থানীয় ভাবে সে আবেদন মঞ্জুর করেন ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের দিলশোভা বিবি। তাঁর স্বামী ব্লক তৃণমূলের সদস্য শেখ হাসিবুল দাবি করেন, ‘‘পরিবারটি অত্যন্ত দুঃস্থ বলে জিআর দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’’ আত্মীয়দের একাংশের অভিযোগ, সে সাহায্য মেলেনি।
তবে জেলাশাসকের দাবি, পরিবারটি ২৭ মার্চ বাচ্চাদের স্কুল থেকে দু’কেজি চাল, এক কেজি আলু, এপ্রিলের গোড়ায় রেশন থেকে সাত কেজি চাল, সাড়ে ১০ কেজি আটা এবং ৫ এপ্রিল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দু’কেজি চাল, এক কেজি আলু পেয়েছে। বিডিও-র দাবি, ‘‘উনি (রহিম) ব্লক অফিসে জিআর-এর আবেদন করেননি।’’
খাবার পেয়েও সাহায্য চাইছিলেন কেন? রহিম বলেন, ‘‘লকডাউনে রোজগার নেই। রেশন-সহ যা খাবার পেয়েছি, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব কম। বুধবার থেকে বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। সামান্য মুড়ি আর বেশির ভাগ সময়ে জল খেয়ে কাটিয়েছি সবাই।’’ তবে জেলাশাসক বলেন, ‘‘স্বাভাবিক মানুষ যা খান, সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার পরিবারটিকে দেওয়া হয়েছে।’’