করোনার ঠেলায় হালখাতা এবার নমো নমো করে
এ বার হালখাতার কী দশা হবে? প্রতিবার এই সময় লাল খাতা, গণেশ মূর্তি নিয়ে বিকিকিনি শুরু হয়। এ বছর কি তা হারিয়ে গেল? এই প্রথম, পয়লা বৈশাখে সমস্ত দোকান থাকছে বন্ধ। তা হলে আর কীসের হালখাতা!
প্রতিবছর এই রাজ্যে হালখাতা তৈরি হয় প্রায় সাড়ে চার লাখ। জানুয়ারি থেকে তোড়জোড় শুরু হয়। চলে মার্চ পর্যন্ত। প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো কর্মী কাজ করেন এই হালখাতা তৈরিতে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মত সব মিলিয়ে অন্তত তিন কোটি টাকার ব্যবসা হয় হালখাতাকে ঘিরে। কেন না, এই রাজ্যে তৈরি হালখাতা যায় রাজ্যের বাইরেও। কিন্তু এ-বার?
বৈঠকখানা এলাকার হালখাতা-ব্যবসায়ী ইন্দ্রনীল সাহা জানালেন, ‘কালীপুজোর পরে-পরেই উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি থেকে আসে, আমাদের খাতা তৈরির ‘খেরো’। সেই দিয়ে মলাট বানিয়ে, তারপর কাগজ কেটে তৈরি হয় ‘খেরোর খাতা’। হালখাতা। কাজ অনেকটাই এগিয়ে, এখন থমকে দাঁড়িয়েছে। বৈঁচি-জয়নগর-বর্ধমান-রানাঘাট থেকে কারিগররা বসে রয়েছে।’
অথচ একসময় লাল শালুতে মোড়া, ইয়া মোটা এই নতুন ‘হালখাতা’ ঘিরেই কী আহ্লাদে মেতে উঠত বাঙালি। বিকেল হতে-না-হতেই, বাড়ির কত্তার হাঁকডাকে সচল হত সংসার। কারণ সাঁঝবেলায়, সেজে বেরোতে হবে। সোনার দোকানে, শাড়ির দোকানে না গেলেই নয়। একগাল হাসি মুখে ধুতির মালকোঁচা সামলে, কোনও রকমে দু’হাতে চার-পাঁচটা মিষ্টির বাক্স, নববর্ষের ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে।
আসলে পয়লা বৈশাখ মানে তো আর শুধু হালখাতা নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মিষ্টি-ক্যালেন্ডার-কার্ড-ঠাণ্ডা পানীয় ব্যবসা। ফল-ফুল-পুজো-পুরোহিত… এ যেন এক বিরাট ইন্ডাস্ট্রি। এই লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কার্ড ব্যবসায়ীরা। আর দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাংলার হালখাতার ব্যবসায়ীরা।
কথাবার্তায় স্পষ্ট, এ বছর হালখাতা ছাড়াই হবে পয়লা বৈশাখ। তবু ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এই সময় এই লকডাউনের খুবই প্রয়োজন। দেশের হাল ফিরলে, তবে না হালখাতার হাল।