বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত

April 13, 2020 | 2 min read

বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে যেসব আলোচনা শুনতে বা পড়তে পাওয়া যায় সেখানে অবধারিতভাবে যে ইতিহাসটা বলা হয় তা হচ্ছে – ফসল তোলার সময়ের সাথে রাজস্ব আদায়ের সময় সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ১৫৮৪ খ্রীস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে উদ্ভাবক ফতেহ্‌ উল্লাহ্‌ শিরাজী এই ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন। কেউ কেউ এই ধারণার ক্রেডিটটা আকবরের অর্থমন্ত্রী রাজা টোডর মল আবার কেউ কেউ উজির আবুল ফজলকে দিতে চান। 

আইডিয়া যারই হোক, এ’কথা সত্য যে, আকবরের সময়ে অন্তত রাজস্ব আদায়ের জন্য একটি সৌরবর্ষীয় ক্যালেন্ডার চালু করা হয় যার শুরুটা চান্দ্রবর্ষীয় ক্যালেন্ডার হিজরীর সাথে সমন্বয় করা হয়েছিল। সূর্যের পরিক্রমণের সাথে বাংলা সনের এই ক্যালেন্ডারটি যথাযথভাবে সমন্বিত না থাকায় সেটি সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দে বাংলা অকাদেমির তরফ থেকে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এটি সংশোধন করেন। 

সংশোধনীতে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিনে, আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩০ দিনে এবং অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে হিসেব করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যালেন্ডার গ্রহন করে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বাংলা অকাদেমির ক্যালেন্ডার অনুসৃত হয় না। সেখানে একাধিক প্রকার ক্যালেন্ডার চালু আছে যেখানে মাসে দিনের সংখ্যা ২৯ দিন থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত হয়। একই মাস বিভিন্ন ক্যালেন্ডার বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে হিসেব করা হয়।

বলে রাখা ভাল, আকবরের আমলে এর নাম ছিল ‘ফসলী সন’। অনেকের মতে, আকবরেরও 

ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার সুলতান আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহের আমলে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয়। আরেক দলের মতে, আলা-উদ্‌-দীন হুসাইন শাহেরও আগে গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রীস্টাব্দে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন।

পাশাপাশি, মুঘল ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাসগুলোর নাম শুরুতে ফার্সীতেই ছিল। ৭৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে ভারতবর্ষে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত শক ক্যালেন্ডারের মাসের নাম থেকে এই ১২ মাসের নাম গ্রহন করা হয়। কারণ, এই নামগুলো পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে সার্বজনীনভাবে আগে থেকেই ব্যবহৃত।

মজার ব্যাপার হল, আকবরের সময়ে মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা ফার্সী নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, একত্রিশটা দিনের একত্রিশটা আলাদা আলাদা নাম মনে রাখা ও দিনের হিসেব রাখা একটা অসম্ভব ব্যাপার, তাও আবার বিদেশী ভাষায়। তাই সম্রাট শাহ্‌জাহানের আমলে ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সপ্তাহের পূর্বপ্রচলিত নামগুলো পুনঃপ্রচলিত হয়।

বাংলা নববর্ষকে ভিত্তি করে কিছু যজ্ঞ-পূজার ব্যাপার পরে প্রচলিত হয়ে থাকলেও শুরু থেকে এই উৎসবটা একেবারেই লৌকিক। বাংলায় এমন বড় মাপের সার্বজনীন সেকুলার উৎসব আর নেই। প্রত্যুষে স্নান, নতুন পোশাক পরা, হলকর্ষণ, প্রাতঃরাশে দই-চিঁড়ে বা দুধ-খই-মুড়কি, দুপুরে মাছ-নিরামিষ খাওয়া, মেলা, জলকেলী, গান এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ ছিল। ইদানিং মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবে যুক্ত হয়েছে। 

এই উৎসব, এই ক্যালেন্ডার আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতীক। সার্বজনীনভাবে এর পালন দেশে শুভ’র চর্চ্চা বাড়াবে, অশুভকে নাশ করবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#শুভনববর্ষ, #পয়লাবৈশাখ

আরো দেখুন