প্রতিমা নয়, করোনাসুর রোধে সুরক্ষা-ঢাল তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী
প্রতি বছর এই সময়ে সপরিবার দুর্গাকে নিয়ে তিনি মশগুল থাকেন। এই বছর অবশ্য ধরাধামে নতুন অসুর, করোনাভাইরাসের প্রবল তাণ্ডব শুরু। বদলে গিয়েছে সারা পৃথিবীর সব চালচিত্র। তাই, প্রতিমা নির্মাণের বদলে এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্রতী চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষাকবচ বানাচ্ছেন কৌশিক ঘোষ। তিনি প্রতিমা বানান ফাইবার দিয়ে। সেই জায়গায় পুরু প্লাস্টিক দিয়ে গড়ছেন হেড বা ফেস শিল্ড।
অন্যান্য বছর গরম পড়তে না-পড়তেই কুমোরটুলির ওই শিল্পীর নাওয়া-খাওয়া কাজের চাপে শিকেয় ওঠে। ফাইবারের প্রতিমা তৈরি আর তা বিদেশে পাঠানোই বহু বছরের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে কৌশিকের কাছে। কখনও ব্রিটেন, কখনও আমেরিকা, কোনও বার কানাডা কিংবা কোনও বছর অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয় সে সব প্রতিমা। কিন্তু এই বছরটা তো আগের বছরগুলোর মতো নয়!
করোনার দাপটে প্রায় সারা দুনিয়াই লকডাউনের কবলে। ফলে, প্রতিমার চাহিদাও তেমন নেই। কৌশিক ন’টি প্রতিমা গড়ার পর আর বানাননি। এ বার পুজোর বাজার কতটা জমবে বা আদৌ জমবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়। তাই, বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রতিমা তৈরির সেই ব্যস্ততা নেই ফাইবারের প্রতিমাশিল্পী হিসেবে খ্যাত কৌশিকের।
এমনই সন্ধিক্ষণে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক নিজেদের উদ্যোগেই নিজেদের সুরক্ষাবর্ম তৈরির বরাত দেন প্রখ্যাত শিল্পী অমরনাথ ঘোষের ছেলে কৌশিককে। পড়শি আরও কয়েক জন শিল্পীকে সামিল করে প্রতিমার বদলে এখন সেই শিল্ডই ‘গড়ছেন’ কৌশিক।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কেমন এই ঢাল?
কৌশিক জানাচ্ছেন, ২০০ মাইক্রন ঘনত্বের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই শিল্ড মাথায় বেধে নিলে তাতে কপাল থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে থাকে। এটি পরলে কোভিড-নাইনটিন আক্রান্ত কিংবা সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নাক-মুখ থেকে বেরোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ড্রপলেট সেঁধিয়ে যেতে পারে না চিকিৎসক-নার্স-চিকিৎসাকর্মীর নাক-মুখ-চোখে। ফলে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা মেলার নিশ্চয়তা অনেকটাই। খড়্গপুর আইআইটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন মিলে এর নকশা তৈরি করে দিয়েছেন এমন ভাবে যে, এই শিল্ড পরে নিলেও তার তলায় স্বচ্ছন্দে চশমা বা গগলস পরা যায়।
কৌশিকের কথায়, ‘আপাতত মেডিক্যালের ডাক্তারবাবুরা আমাকে ৪০০ পিস শিল্ড তৈরি করতে বলেছেন। সোমবার কাজ শুরু করেছি। ওঁরা ইতিমধ্যেই ৫০টি শিল্ড নিয়ে গিয়েছেন। আরও ২০০টি শিল্ড এখন রেডি।’ শিল্পীর আশা, তাঁর তৈরি এই হেড বা ফেস শিল্ডের কথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের মুখে মুখেই অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার-চিকিৎসাকর্মীরা অচিরে জেনে যাবেন। সে কথা মাথায় রেখে কৌশিক আরও বেশি সংখ্যায় এই শিল্ড তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।