টেস্টকে সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দিশা
করোনা নিয়ন্ত্রণে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে আগাগোড়া সওয়াল করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এত বড় জনবহুল দেশে তা কী ভাবে সম্ভব, কেমন করেই বা টেস্ট পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ করা যায়, তার সুলুকসন্ধান করাই এখন লক্ষ্য স্বাস্থ্য মহলের। বৃহস্পতিবার বেনেট বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত একটি অনলাইন আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে অবশ্য উঠে এল এমনই হরেক উপায়ের সন্ধান যেখানে কম খরচে দ্রুত করোনা পরীক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব।
গোয়ার নামজাদা ল্যাবরেটরি, মলবায়ো ইতিমধ্যেই করোনা চিহ্নিতকরণের কিট তৈরির ছাড়পত্র পেয়েছে আইসিএমআর থেকে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে টেস্ট পরিকাঠামো সম্প্রসারণে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে এই সংস্থার তৈরি মাইক্রো পিসিআর যন্ত্র। ব্যাটারি চালিত এবং সহজে বহনযোগ্য এই যন্ত্রটি প্রাথমিক স্থাস্থ্যকেন্দ্রে তৃণমূলস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা পরিচালন করা সম্ভব বলে দাবি সংস্থার।
বৃহস্পতিবার, বেনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সিইও শ্রীরাম নটরাজন। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমাদের কাছ থেকে এই পিসিআর মেশিন নিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, গোয়া। ভারত সরকার সম্প্রতি আমাদেরকে এই মেশিনের বরাত দিয়েছে গোটা দেশে সুষমভাবে বণ্টন করার জন্য।’
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স ও ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট স্ট্রাউড ব্যাখ্যা করেন, কী ভাবে নভেল করোনাভাইরাসের স্পাইক কোষের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে সংক্রমণটা ঘটায়। তিনি বলেন, ‘ওই স্পাইকগুলি যাতে কোষের গায়ে গেঁথে যেতে না-পারে, বরং ভেঙে যায়, সেটার উপযোগী রাসায়নিকেরই খোঁজ চলছে। সেটিই হবে করোনার ওষুধ।’
একই সুর শোনা গিয়েছে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থমাস টোমাসিয়াকের গলায়। তিনি জানান, তাঁদের মনে হয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ভালো কাজ করতে পারে গ্লাইকোপ্রোটিন কমপ্লেক্স। এর উৎপাদন বেশ কঠিন হলেও সেই কাজটিই করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ক্রিসফাস সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরে নভেল করোনাভাইরাসকে খুঁজে বের করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছেন সিএসআইআরের ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির গবেষকরাও।
এদিনের আলোচনা চক্রে উপস্থিত সেখানকার সিনিয়র গবেষক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্রিসফাস সিস্টেম ব্যবহার করে যে পদ্ধতিটা বের করেছি, তার নাম দেওয়া হয়েছে ফেলুদা। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে আধ ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কারও শরীরে করোনার উপস্থিতি জানা সম্ভব।’
দেশে পর্যাপ্ত টেস্ট না হওয়ার প্রসঙ্গও অবশ্য এদিন উঠে আসে ‘ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড টেস্টিং’ শীর্ষক আলোচনায়। শান্তা বায়োটেকনিকসের চেয়ারম্যান ভারাপ্রসাদ রেড্ডি একদিকে যেখানে বলেন, ‘লকডাউন হয়তো আমাদের প্রথম ডিফেন্স হতে পারে, কিন্তু করোনায় আসল তফাত গড়ে দেবে পর্যাপ্ত পরীক্ষাই।’
সেখানেই দেশে প্রথম করোনা কিট তৈরির ছাড়পত্র পাওয়া মাইল্যাব ডিসকভারি সলিউশনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হসমুখ রাওয়ালের মত, ‘ভারত করোনা পরিস্থিতিতে খুব ভালো রেসপন্ড করেছে এ পর্যন্ত। যেভাবে ভারতে টেস্টের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ানো হচ্ছে, তাতে আমরা ভালো পরিস্থিতিতেই থাকব বলে মনে করি। এই হারে এগোলে মে মাসের শেষ পর্যন্ত ৪ লক্ষ টেস্ট হয়ে যাবে দেশে।’