বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

মৃত্যুর ছয় দশক অতিক্রান্ত, বিপ্লবী-সাংবাদিক বারীন ঘোষ বিস্মৃত

April 18, 2020 | 2 min read

সংবাদ ও সাংবাদিক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সাংবাদিক সংবাদ লিখবেন সেটাই দস্তুর। কিন্তু বিপ্লবী সাংবাদিক ! হয় না কি ? হয়। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে ৬১ বছর। আত্মবিস্মৃত বাঙালি খুব সম্ভব তাঁকে ভুলেছে। তিনি শ্রীঅরবিন্দ অনুজ বারীন্দ্র কুমার ঘোষ। বারীন ঘোষ বলেই সমধিক পরিচিত। স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার পাশাপাশি করেছেন সাংবাদিকতা। করেছেন দক্ষতার সঙ্গে পত্রিকা সম্পাদনার কাজ। লিখেছেন প্রচুর বই। দুই ক্ষেত্রেই বিপ্লবী সাংবাদিক বারীন ঘোষ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন।

ব্রিটিশের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা সাংবাদিক তখন অনেকেই ছিলেন। কেউ স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়েও পড়েছিলেন। যেমন লোকমান্য  বালগঙ্গাধর তিলক। মারাঠী সাপ্তাহিক কেশরীতে ব্রিটিশ বিরোধী লেখা লিখতেন। দ্য হিন্দুর সুব্রহ্মন্যম আইয়ার, অমৃতবাজারের শিশির কুমার ঘোষ ও মতিলাল ঘোষ জাতীয়তাবাদী লেখা লিখতেন  তাঁদের কাগজে। 

‘দি হিন্দু পেট্রিয়টে’র সম্পাদক তথা সাংবাদিক হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর পত্রিকায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন লিখে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাগারের  মধ্যে নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়া মালয়ালম কাগজ প্যাট্রিয়টের সম্পাদক রামকৃষ্ণ পিল্লাই বা দ্য লিডারের পন্ডিত মদনমোহন মালব্য উল্লেখযোগ্য। 

কিন্তু বারীন ঘোষ ছিলেন ব্যতিক্রমী চরিত্র। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতে লিখেছেনও প্রচুর। একইসঙ্গে  সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়েন সশস্ত্র বিপ্লবে। যুগান্তর বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন বাঘাযতীন, উল্লাসকর দত্ত, সুবোধ চন্দ্র মল্লিক প্রমুখের সহায়তায়।

১৯০৬ সালে বারীন ঘোষ প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকা। উল্লেখযোগ্য, মানিকতলা বোমার মামলার অন্যতম আসামী বারীন ঘোষের দ্বীপান্তর হয় আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে। দীর্ঘ ১২ বছর কারাবাসের পর ১৯২০তে বারীন ফিরে আসেন কলকাতায়। শুরু করেন সাংবাদিকতা। 

রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে মাঝেমধ্যে ছেদ পড়লেও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি সাংবাদিক বারীন ঘোষ। যুক্ত হন ইংরেজি সাপ্তাহিক দ্য ডন অফ ইন্ডিয়াতে। সেটা ১৯৩৩। পরে যুক্ত হন জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানে। ছিলেন কলামনিস্ট। ১৯৫০এ যোগ দেন বসুমতীতে। দৈনিকে উন্নীত করেন পত্রিকাটিকে। পালন করেছেন সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। 

তাঁর শক্তিশালী কলমে লিখে গিয়েছেন দ্বীপান্তরের বাঁশি, অগ্নিযুগ, পথের ইঙ্গিত এবং দ্য টেল অফ মাই এক্সাইল প্রভৃতি গ্রন্থ। এছাড়া শ্রীঅরবিন্দ ও রাজনারায়ণ বসুর উপর দুটি বইও লেখেন বারীন ঘোষ।

মৃত্যুর পর ৬১ বছর অতিক্রান্ত। তাঁকে ভুলেছে বাঙালি। মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমও কি তাঁর কথা ভুলেছে !

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#History, #barindra kumar ghosh, #West Bengal

আরো দেখুন