শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বেশি মুর্শিদাবাদে, চিন্তায় রাজ্য
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় মুর্শিদাবাদ জেলা চিন্তায় রেখেছে রাজ্যকে। শুক্রবারই সেখানে এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। পাশাপাশি, নবান্নে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাও জানান, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি) বা প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এই জেলার মানুষই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা বিষয়টিকে ক্যাজুয়ালি নিও না। একজন আক্রান্ত থেকে একশো, তার পর এক হাজার হয়ে যাবে।’ মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ দিন রাজীব বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক সারি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। একটা করোনা কেস পাওয়া গিয়েছে। জেলার জনঘনত্ব একটু বেশি। সেখানে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন। ওখানে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সারি আর ইলি (ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ) নিয়ে থাকা মানুষদের খুঁজে বের করে সারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’
লকডাউন উপেক্ষা করে ধর্মস্থানে জমায়েতের ঘটনায় বিব্রত হতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। যার জেরে সরিয়ে দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদবকেও। শুক্রবারই তাঁর বদলে জেলার পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেরী রাজকুমারকে। জেলার ৮০ লক্ষ মানুষকে ঘরে বন্দি করাটাই জেলা প্রশাসনের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ এখন।
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2020/04/saskosto-1024x576.jpeg)
ঘটনা হল, লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হতেই ভিন রাজ্য, জেলায় কর্মরত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকের মানুষ ফিরে এসেছেন বাড়িতে। এক কামরার ঘরে কোনওমতে মাথা গুঁজে থাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে স্বভাবতই। ফলে, দীর্ঘদিন লকডাউনে তিতিবিরক্ত মানুষ বেরিয়ে আসছেন রাস্তায়। সকাল হতেই মোড়ে মোড়ে জটলা। জেলার মানুষকে ঘরবন্দি করতে পুলিশের তরফে চেষ্টার ত্রুটি না-থাকলেও, টহলদারি সরে গেলেই ফের বাইরে বেরিয়ে আসছেন মানুষ। কিছুটা একই সমস্যা মালদা জেলারও। তাই দুই জেলাতেই নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয় নবান্ন থেকে।
শুক্রবারই সালারের বাসিন্দা এক ক্যান্সার আক্রান্তর শরীরে করোনা ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘করোনা সংক্রমণের উপসর্গের মধ্যে প্রবল শ্বাসকষ্ট অন্যতম। সেই কারণেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকও সারি আক্রান্ত সমস্ত মানুষের করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদে সারি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়া মানে, সেই আক্রান্তদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ মেলার সম্ভাবনাও বেড়ে যাওয়া।’ এহেন পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শুধু প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদেরই নয়, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ থাকা মানুষদেরও চিহ্নিত করার বিশাল কর্মকাণ্ড মাথায় তুলে নিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। শুধু চিহ্নিতকরণই নয়, আক্রান্তদের পৃথক হাসপাতালে রাখার জন্য প্রত্যেক জেলায় অন্তত একটি করে সারি হাসপাতালও চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানা গিয়েছে। সংক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে সারি এবং ইলি আক্রান্তদের সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে এই হাসপাতালগুলিতে ভর্তি রাখা হবে। তার পর সেখান থেকেই প্রত্যেকের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা আক্রান্তদের চিহ্নিত করে স্থানান্তর করা হবে করোনা হাসপাতালে। ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি ভট্টাচার্যর কথায়, ‘করোনা সংক্রামিত ব্যক্তিদের অবস্থা জটিল হয়ে গেলে প্রবল শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করা গেলে ভালো।’ আর এক ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ রাজা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘প্রবল শ্বাসকষ্ট বা সারি থাকলে মানুষ হাসপাতাল ভর্তি হবেনই। বরং ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ নিয়েই মানুষ বাড়িতে বসে থাকেন। তাঁদের খুঁজে বের করা গেলেই করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করি।’