গঙ্গার দুই পাড়ে বেলাগাম ভিড় সব্জি ও ফুলবাজারে
শুক্রবারই কলকাতা ও হাওড়ার মতো ‘রেড জোন’-এ গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গঙ্গার দু’পাড়ের দুই পাইকারি সব্জি ও ফুলবাজারের ভিড় নিয়ে মাথাব্যথা বাড়ছে প্রশাসনের।
নবান্নে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, হাওড়ার পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। প্রয়োজনে মোতায়েন করা হবে সশস্ত্র পুলিশও। লকডাউনের মধ্যে বাজারে ভিড় করা চলবে না। মাস্ক ছাড়া গেলে ঢুকতে দেওয়া হবে না বাজারে। তবে এখনও গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে হাওড়া বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া পাইকারি সব্জি বাজারে এক ফুট দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, গায়ে গা লাগিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগের মতোই চলছে কেনাকাটা। গঙ্গার পূর্ব পাড়ে মল্লিকঘাট ফুলবাজারের চিত্রটা এতটা খারাপ না হলেও অনাবশ্যক ভিড় এড়ানো যাচ্ছে না সেখানেও। সব্জি ছাড়া খাওয়াদাওয়া সম্ভব নয়। তাই মুদিখানা বা ওষুধের মতো সব্জি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। তাই সাধারণ মানুষের বক্তব্য, লকডাউনের কারণ যখন সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ, তখন ফুলবাজার চালুর প্রয়োজন ছিল না।
গত সপ্তাহে হাওড়ার সালকিয়ায় এক মহিলার মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওই মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধর্মতলা বাজারে ফুল কিনতে যেতেন। অবশ্য হাওড়া পুর নিগম পরে ওই বাজার বন্ধ করে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করে। আবার হাওড়ার রাজবল্লভ সাহা লেনের বাসিন্দা, কলকাতার বড়বাজারের এক মুদি দোকানের মালিকের মৃত্যু হয়। তাই যেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে, বাড়তি পদক্ষেপের কথা বলছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে কেন কোনও নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না ওই দুই সব্জি ও ফুলবাজারে, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
হাওড়া বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অঞ্চলে সব্জি ও মাছ বাজার পাশাপাশি। মাছের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকলেও সব্জির চাহিদা রয়েছে আগের মতো। ফলে সব্জি বাজারে ভিড় হচ্ছে প্রতিদিন। সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করেই যথেচ্ছ কেনাকাটা চলছে ওই পাইকারি সব্জি বাজারে।
হাওড়া স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এই সব্জি বাজারে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, বর্ধমান ও হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাষিরা আসেন সব্জি নিয়ে। এই বাজার থেকেই হাওড়া শহরের খুচরো বিক্রেতারা আনাজ কিনে নিয়ে বিক্রি করেন বিভিন্ন এলাকায়। দেখা যাচ্ছে, লকডাউনেও সব্জি বাজারে বিকিকিনি কমেনি। বরং বেড়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ না মেনে জনসমাগম হচ্ছে পাইকারি সব্জি বাজারে। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। স্যানিটাইজার তো দূরের কথা।
দেগঙ্গার সব্জি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আনাজের গাড়ি অনেক জায়গাতেই আটকানো হচ্ছে। তবু বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে আমাদের।’ তবে নজরুলের দাবি, ‘সব্জি বাজারে স্যানিটাইজার না থাকলেও সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। হয় তো সব্জি বিক্রির সময় কথা বলার প্রয়োজনে অনেককে মাস্ক খুলতে হচ্ছে মুখ থেকে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনেক ক্ষেত্রে বজায় রাখা যাচ্ছে না।’ মহম্মদ রমজান নামে আর এক সব্জি বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে এত ভিড় যে, গায়ে গা ঠেকে যাচ্ছে। কিছু করার নেই। তবু আমরা যতটা পারছি চেষ্টা করছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বা মাস্ক পরে কাজ করার।’ হাওড়া স্টেশন এরিয়া ভেজিটেবল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় সোনকর বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, মাস্ক পরতে এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু কেউ কোনও কথা শুনছেন না।’