ইংরেজরা বিক্রি করে দিচ্ছিল তাজ মহল – জানেন সেই ইতিহাস?
মাত্র ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল সাতের মধ্যে এক আশ্চর্যকে। অবিশ্বাস্য হলেও কথাটা সত্যি। মহান এই কাজটা করেছিলেন ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। অন্তত চলতি ইতিহাসে বেন্টিঙ্ককে আমরা সেভাবেই জানি। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩২ সালে ভারতবর্ষে গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন। তখন ইন্দো-বর্মা যুদ্ধ চলছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোষাগারে টান। চীন জুড়ে আফিমের কারবার চালিয়েও কোম্পানির চাহিদা মিটছেনা।
বেন্টিঙ্ক প্রথমে আগ্রা দুর্গের শাহী হামামের প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য সমন্বিত মার্বেল পাথর ও অন্যান্য সামগ্রী উপড়ে নিয়ে বেচে দিলেন। বেশ দু’পয়সা এল কোম্পানির কোষাগারে। ঐতিহাসিক সৌধের সেই পাথর কিনে অনেকেই পাথরের পেপার ওয়েট বানিয়ে বিক্রি করল।
এরপরেই বেন্টিঙ্কের শ্যেন দৃষ্টি পড়লো তাজ মহলের উপর। বেন্টিঙ্কের হিসেবে তাজমহলের মূল্যবান পাথর ভেঙে বিক্রি করলে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা কোষাগারে আমদানি হবে।
প্রথম দফার নিলামে সর্বোচ্চ দাম উঠল দু’লক্ষ টাকা। অত কম দামে তাজমহল বিক্রি করতে বেন্টিঙ্ক রাজি হলেন না। তাছাড়া তাজ মহলের পাশের পুরনো তাজ্গঞ্জ এলাকার হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে প্রজারা তাজ মহল বিক্রি হওয়া আটকাতে রুখে দাঁড়ালো। এই তাজগঞ্জে যারা বাস করত তাদের পূর্বপুরুষরা তাজ মহলের শ্রমিক ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। শাহজাহান কারিগরদের এই তাজ্গঞ্জ এলাকায় জমি দিয়েছিলেন বসবাসের জন্য।
বেন্টিঙ্ক অবশ্য এতে দমে যাওয়ার পাত্র নন। রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধে দ্বিতীয় বার নিলাম ডাকলেন। এতে সর্বোচ্চ দর দিলেন মথুরার শেঠ ব্যবসায়ী লক্ষ্মী চাঁদ জৈন। সাত লক্ষ টাকা। তাজমহল বিক্রি প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু ইতিমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক পার্লামেন্ট মেম্বার তাজ মহল ভেঙে বিক্রি করে দেয়ার এই পরিকল্পনার কথা পার্লামেন্টের নজরে আনেন। গোয়েন্দা দপ্তর তাদের রিপোর্টে বলে মুঘল সম্রাজ্ঞীর সমাধি সৌধ এইভাবে ভেঙে বিক্রি করতে গেলে দেশজুড়ে বিদ্রোহ তো পারে। দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার পূর্বসূরী জন বুল, তাজমহল ভেঙে বিক্রি করার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে।
সব মিলিয়ে হইচই শুরু হয়। কোম্পানির ডিরেক্টর মেম্বাররাও বেঁকে বসেন। শেষে কিছু পাথর বেচতে গিয়ে গোটা দেশটা খোওয়াবো নাকি। শেষপর্যন্ত লর্ড বেন্টিঙ্ক এর এই মহান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হল না। ভাগ্যের জোর বেঁচে গেল তাজমহল।