গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী – বাংলা আজও মনে রেখেছে জনতার রাজ্যপালকে
রাজ্যপাল – এই কথাটা শুনলেই আমাদের মাথায় হামবড়া কোনও নেতা বা আমলার মুখ মনে পরে। তাদের কাজ কি, কেউ জানে না। রাজ ভবনের বাইরেও খুব একটা দেখা যায় না। অনেকেই মনে করেন এই পদটাই তুলে দেওয়া উচিত।
রাজ্যপাল যে নিজের প্রোটোকল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে সাধারনের সঙ্গে মিশে যেতে পারে, এটা বাংলার মানুষ প্রত্যক্ষ করে গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী রাজ্যপাল থাকাকালীন। তিনি সেই সময় সাংবিধানিক প্রধান পদের ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্যবাসীর রাজ্যপাল হয়ে উঠেছিলেন। এর জন্য তাঁকে বারবার শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। কিন্তু, এসব কদর্য আক্রমণ কখনোই তাঁকে মানুষের থেকে দূরে রাখতে পারেনি।
যখন সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন চরমে ওঠে, তখন রাজ্যপাল নিজে মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ নেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক জায়গায় এনে বৈঠক করেন। মধ্যে। নিরপেক্ষতার জন্য তিনি অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হন।
এরপর যখন ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে নন্দীগ্রামে গ্রাম দখলের লড়াই শুরু হয়, তিনি প্রকাশ্যে নিন্দা করেন। তাঁর বিবৃতিতে বলা হয়েছিল রাজ্যে ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাস’ চলছে। একদিকে যখন শাসকদল সূর্যোদয়ের কথা বলছিল, রাজ্যপাল লেখেন, “দীপাবলির পর নন্দীগ্রামে আবার অন্ধকার নেমে এলো।”
বাম আমলে মানুষ একপ্রকার মেনেই নিয়েছিল যে সন্ধ্যে হলেই বিদ্যুৎ থাকবে না। তীব্র গরমে মানুষ বিদ্যুৎ ছাড়া থাকাতে একরকম নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল সকলে। সেই সময় সাধারণ মানুষের সাথে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করতে রাজভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ দিনে দু’ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, গ্রীষ্মের এই দাবদাহে সমস্ত কলকাতাবাসী যখন বিদ্যুৎ ছাড়া কষ্ট পাচ্ছে, রাজভবন কেন ব্যতিক্রম হবে?
তিনি যখন কোনও নিরাপত্তা ছাড়া লাইনে দাঁড়িয়ে মেট্রো রেলের টিকিট কেটে মেট্রোতে চড়েন, তখন তিনি একেবারে মানুষের মন জয় করে নেন। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্সী কলেজে রজত কান্ত রায়ের ইতিহাস পড়ানো শুনতে তিনিও ছাত্রদের সঙ্গে ক্লাস করেন। অনেকেই বলেন, আব্দুল কালাম যেমন জনতার রাষ্ট্রপতি হয়ে উঠেছিলেন, গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী ছিলেন জনতার রাজ্যপাল।
বাংলা কি আর কখনও পাবে এরকম একজন রাজ্যপাল?