জঙ্গলমহলে লকডাউন ভেঙেই চলল শিকার
জঙ্গলমহলে শিকার উৎসব অব্যাহত। লকডাউন উপেক্ষা করেই বিভিন্ন জঙ্গলে চলছে শিকার। সোমবার মেদিনীপুর বন বিভাগের চাঁদড়া বনাঞ্চল এলাকায় দিনভর লুকোচুরি খেলা চলল শিকারি ও বনকর্মীদের মধ্যে। বিশাল জঙ্গলে শ’য়ে শ’য়ে শিকারী। আর তাদের আটকাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন গুটি কয় বন দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মী। ফলে শিকারীদের আটকানো বড় চ্যালেঞ্জ। বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘শিকার আটকাতে সারা বছর মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। লক ডাউনের ফলে দূর-দুরান্তের শিকারিরা আসতে না পারলেও স্থানীয় কিছু লোকজন বেরিয়ে পড়ছেন। বুঝিয়ে তাদেরও শিকার থেকে বিরত করার চেষ্টা করছি।’
শিকার করতে না পারলেও, তির-ধনুক, টাঙি, বল্লম সমেত নানা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিকারিরা। সোমবার মেদিনীপুরের চাঁদড়া এলাকার তামাকবাড়ি জঙ্গলে ছিল শিকারের নির্দিষ্ট দিন। শিকার আটকাতে প্রস্তুতিও নিয়েছিল বন দপ্তর। কিন্তু বিশাল জঙ্গলের একদিকে ঘিরলে, অন্য দিক দিয়ে ঢুকে পড়ে শিকারির দল। অন্যান্য বছরের তুলনায় শিকারীর সংখ্যা কম হলেও একেবারে আটকানো যায়নি শিকারিদের।
পুলিশ ও বন দপ্তরের কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে চলছে দেদার শিকার। স্থানীয় বন দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, ‘লকডাউন চলায় সমস্ত কাজ বন্ধ। সবাই প্রায় ঘরে। ফলে জঙ্গল এলাকায় শিকারের যে নির্দিষ্ট দিন থাকে, সেই দিন গুলিতে নামে মাত্র লোক বেরিয়ে অন্য দিন শিকারে বেরোচ্ছে বেশি। যেমন রবিবার কোনও শিকারের দিন ছিল না। কিন্তু ওই দিন চাঁদড়া রেঞ্জের মনিদহ অঞ্চলের মৌরা জঙ্গলে ঢুকে পড়ে একদল শিকারি। দিনের শেষে বন্যপ্রাণী শিকার করে কাঁধে ঝুলিয়ে মহানন্দে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় তাদের।
সোমবার তামাকবাড়ি এলাকায় শিকারের নির্দিষ্ট দিন ছিল। সেই মতো বনদপ্তরের কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন চাঁদরা রেঞ্জের অফিসার সুজিত পণ্ডা। শিকারিদের ধরতে এদিক থেকে ওদিক দৌড়ে বেরালেন জঙ্গলে। শিকারিরাও বনকর্মী, আধিকারিকদের দেখে বিশাল জঙ্গলে গা ঢাকা দেয় সাময়িক ভাবে। বনকর্মীরা চলে গেলেই আবার শিকারে বেরিয়ে পড়ে তারা।
ঘটনা প্রসঙ্গে চাঁদড়া রেঞ্জ অফিসার সুজিত পন্ডা বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা শিকার আটকাতে প্রস্তুত ছিলাম। যেখানেই খবর পেয়েছি, সেখানেই দৌড়ে গিয়েছি। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন বেরিয়ে পড়ছে। তাদের বুঝিয়ে বাড়ি ফেরাতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘শিকারের দিন না হলেও কিছু মানুষ বেরিয়ে পড়ছেন। শিকার আটকাতে সারা বছর সচেতন করার কাজ করে চলেছে বন দপ্তর। এমনকী, সাঁওতাল মোড়লদের নিয়ে আমরা ঘুরছি, বোঝাচ্ছি। এখন কিছু অ-আদিবাসী লোকজনও শিকারে বেরিয়ে পড়ছেন মজা নেওয়ার জন্য।’
শিকার উৎসব প্রসঙ্গে মেদিনীপুর ডিভিশনের এডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু লোক বেরোচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। সারা বছর চেষ্টা চালিয়ে কিছুটা সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শিকার একেবারেই বন্ধ হবে।’