মুখে করে খাবার তুলে ত্রাণ দিচ্ছেন সিউড়ির জগন্নাথ
হাত দিয়ে তিনি ত্রাণ বিলি করতে পারেন না। তাতে কী? মুখে করে চাল-ডালের প্যাকেট দিব্যি তুলে দিচ্ছেন দুঃস্থদের। আসলে প্রতিবন্ধকতা কোনদিনই তাঁর কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তা শারীরিক হোক বা আর্থিক।
জগন্নাথ বলেন, ‘আমার দুটি হাত নেই জন্ম থেকেই। টিউশন পড়িয়ে যেটুকু আয় হয় সেই টাকা দিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা দুঃস্থ মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু মাঝপথে টাকা যখন শেষের পথে, তখন আমার বন্ধু এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিছু খাদ্যসামগ্রী আমার হাতে তুলে দেয়। আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে সেই খাবার গরিব মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছি।’
সেই ছোটবেলা থেকেই দুটো হাত নেই সিউড়ির হাটজনবাজারের জগন্নাথ মাহারার। চরম দারিদ্র ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বড় হয়েছেন তিনি। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে এখন সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জগন্নাথ। যে পা দিয়ে চলাফেরা, সেই পায়ের আঙুলে কলম ধরে চলে লেখাপড়া। নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে প্রাইভেট টিউশনও করেন তিনি।
পা-দিয়ে ব্ল্যাক বোর্ডে আঁকিবুকি কাটতে মাঝে মাঝে পায়ের আঙুলে খুব ব্যথা হয়। তবুও হাল ছাড়ার পাত্র নন তিনি। সেই টিউশন পড়িয়ে যে টাকা জমিয়েছিলেন, তা দিয়েই চাল-ডাল কিনে লকডাউনের মাঝে নিরন্ন মানুষদের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দিয়েছেন তিনি। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। জগন্নাথের মতে, ‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে প্রথমে দরকার মানসিকতা বা ইচ্ছা।’
বীরভূমের স্নেহ নামে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই জগন্নাথের এই উদ্যোগের শরিক হয়েছে। তারা সবরকম সাহায্য করছে যাতে প্রতিকূলতাকে জয় করে সেবাকাজ চালিয়ে যেতে পারেন তিনি। জগন্নাথের সহকর্মী শ্রীকান্ত ঘোষ বলেন, ‘আমরা এক সঙ্গে এই উদ্যোগে নেমেছি লকডাউনের দিন থেকেই। চেষ্টা করেছি দুঃস্থ মানুষদের পাশে থাকার। জগন্নাথ ছোট থেকেই শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও পরোপকারী।’
জগন্নাথের মা ছায়া মাহারা বলেন, ‘আমাদের ঘরেই অন্ধকার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্ত ছেলেটা ছোট থেকেই অন্যের কষ্ট দেখলে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। এখনও তাই করছে। ফুটপাতের লোকজনদের খাবার দিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে এটা ঠিক, এ কাজে ছেলেকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে অনেকে