সত্যজিৎ রায় – যিনি ইন্দিরা গান্ধীকেও না বলার ক্ষমতা রাখতেন
কাজের বাইরে সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে বড় দুটি গুণ, যা সর্বজন বিদিত, তা হল তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর গলার স্বর। এমন কঠিন ব্যক্তিত্বের মানুষ সত্যিই বড় বিরল।
তাঁর ভালো কাজে যখন তিনি প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন তখন যেমন বিচলিত হয়ে পড়েননি ঠিক সেরকমই তীব্র সমালোচনার মুখে ভেঙ্গেও পড়েননি। যে তিন বাঙালির নাম গোটা বিশ্বে এক নিশ্বাসে বলা হয় তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায় এবং অমর্ত্য সেন। এই অহম সত্যজিৎ রায়কে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি।
কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করতেন। তার অন্যতম কারণ তিনি খুব ভালো ছবি আঁকতেন। কিন্তু ১৯৫৫ সালে ‘পথের পাঁচালী’ ছবির মুক্তির পরেই তিনি স্থির করেন অ্যাডের কাজ ছেড়ে তিনি শুধু সিনেমা বানানোয় মনোনিবেশ করবেন। করলেনও তাই।
এত সাবলীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে অনুরোধ করেন জনহিতে নেহেরুর ভূমিকার ওপর একটি অথ্যচিত্র বানাতে। দীপ্ত কন্ঠে সত্যজিৎ না বলে দেন। বলেন এই কাজে তাঁর কোন ইচ্ছে নেই। হয়তো এই ভাবে ইন্দিরা গান্ধীকে না বলার সাহস অন্য কেউই দেখাতে পারতেন না।
তাঁর ব্যক্তিত্বের আরো এক প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯২ সালে। যখন মানিকবাবু মৃত্যু শয্যায়। এই অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও তাঁর মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে দেখা করতে আসেন। তিনি সত্যজিৎ বাবুকে বলেন, “এখানে একসাথে আমরা তিন প্রজন্ম আছি। আমরা সবাই আপনার কাজের খুব বড় ভক্ত। আপনার সাথে একটা ছবি তুলতে চাই।” সত্যজিৎ রায় তাঁকেও না করে দেন। বিনম্র ভাবে বলেন, “হাসপাতালের বাইরে বেশ কিছুদিন ধরে সাংবাদিকরা রয়েছে আমার ছবি নেওয়ার জন্যে। আমি সবাইকে না করে দিয়েছি। এখন আপনার সাথে ছবি তুললে সেটা কি ঠিক হবে? সবাই মনে করবে আপনি প্রধানমন্ত্রী তাই আপনার পদের কাছে আমি মাথা নত করেছি। এটা বৈষম্যের মিথ্যে বার্তা বহন করবে।”
হয়তো এমন ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি আজও সবার থেকে আলাদা। মৃত্যুর এতদিন পরেও সত্যজিৎ বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর কাছে অমর।