সর্বকালীন সত্যজিৎ – আজও সমান প্রাসঙ্গিক
ভারতের যে সব বহুমুখী প্রতিভার জন্ম হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের নাম বরাবরই সেই তালিকার প্রথম সারিতে। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের পর তিনিই একমাত্র বহুমুখী প্রতিভা যার কাজে সারা বিশ্ব মোহিত হয়েছিল। তাঁর সিনেমা, গল্প, গান, ছবি – সব কিছুই মুগ্ধ করেছিল ভারত তথা গোটা পৃথিবীকে।
ভারতবর্ষের প্রথম অস্কার জয়ী এই বাঙালি চিত্র পরিচালক বাংলা সিনেমার ইতিহাসকে পৌঁছে দিয়েছিলেন এক অন্য স্তরে। তাঁর প্রতিটি সিনেমাই সর্বকালীন। কোন নির্দিষ্ট যুগ বা সময়ে কখনোই বেঁধে রাখা যায়নি মানিক বাবুকে। তাঁর স্বতন্ত্র বাংলা সিনেমাগুলি বাঙালি ছাড়াও সমানভাবে স্পর্শ করেছিল বিভিন্ন কালের সমস্ত বিশ্ববাসীকে।
সত্যজিৎ রায়ের কথায়, “ প্রতিটি সিনেমারই একটি হ্যাপি এন্ডিং প্রয়োজন। তার আগে যতোখুশি দুঃখ, কান্না আসুক। শেষটি সুখকর হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এটা সিনেমার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
সত্যজিৎ রায় সিনেমা তৈরীর প্রতি ঠিক কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তা আমরা সিনেমা তৈরির টাকা যোগাড়ের জন্যে বাড়ি বেঁচে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই বুঝতে পারি। তিনি একাধারে যেমন সংলাপ লিখছেন, গান লিখছে, সিনেম্যাটোগ্রাফি দেখছেন, তেমনি সিনেমার সেট সাজাচ্ছেন, পোশাক ডিজাইন করছে। এই সব কিছুই নিজে হাতে করার জন্যে তাঁর প্রতিটি সিনেমাই হয়ে উঠেছে এক একটা মাস্টার পিস।
তিনি প্রতিটি দৃশ্যের শুটিং এর আগে সেই দৃশ্যের স্কেচ করতেন। এটি তাঁকে আরো নিখুঁত দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করতো। গোটা বিশ্ব তাঁর নিখুঁত সৃষ্টির জন্যে তাঁকে এক সৃজনশীল প্রতিভাবান নির্দেশকের স্বীকৃতি দিয়েছিল।
মানিকবাবু তাঁর জীবনে ৩৫ টি ছবি বানিয়েছেন। ছোটদের জন্যে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। তাঁরই সৃষ্টি দুই চরিত্র ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কু, যাতে আজও যেকোন বয়সের বাঙালি বুঁদ হয়ে থাকে। তাঁর তৈরী প্রথম সিনেমা পথের পাঁচালী ১১ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। অপুর সংসার, অপরাজিত, চারুলতা, ঘরে বাইরে সব কটি ছবি নিজ নিজ স্থানে অনন্য।
জাতীয় পুরস্কার, বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যওয়ার্ড, গোল্ডেন লাইয়ন অ্যওয়ার্ড নিয়ে তিনি মোট ৩২ টি পুরস্কার পান জীবদ্দশায়। ১৯৯২ সালে অস্কার পুরস্কার পান লাইফ টাইম অ্যচিভমেন্ট ক্যাটাগরিতে। তাঁর প্রতিটি সিনেমা আজও সমান ভাবে যুগোপুযুক্ত। কোনও যুগে কখনই আটকে থাকবে না মানিকবাবুর সৃষ্টি।