হাসপাতাল ঘুরে কেন্দ্রীয় দল জানাল, তারা সন্তুষ্ট
বিএসএফের ঘেরাটোপে বৃহস্পতিবার শহর ঘুরলেন কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা। লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে হালচাল বুঝলেন মহানগরের। গেলেন কলকাতার দু’টি কোভিড হাসপাতালে। স্বাস্থ্যকর্তাদের পাশাপাশি ধৈর্য ধরে কথাবার্তা বললেন রোগীদের সঙ্গে। পিপিই পরে ওয়ার্ডের ভিতর গিয়ে আক্রান্তদের মুখ থেকেই সরাসরি শুনলেন চিকিৎসা, পরীক্ষা ও পরিচর্যা সংক্রান্ত তথ্যবলি।
দিনের শেষে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানালেন, কলকাতা পরিদর্শন করে স্বস্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় দল। আর উত্তরবঙ্গ সফররত দলের তরফে রাজ্য সরকারের সহযোগিতার কথা স্বীকার করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের সামনেই।
বাংলায় লকডাউন ও করোনা চিকিৎসার হাল-হকিকত সরেজমিনে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের গতিবিধিন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল টানাপোড়েন। অবশেষে এ দিন তাঁরা পরিদর্শনে বেরোন। বিএসএফের দু’টি পাইলট কার সঙ্গে নিয়ে দু’টি গাড়িতে কেন্দ্রীয় দলের পাঁচ জন সদস্য গুরুসদয় দত্ত রোডের বিএসএফ অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে প্রথমেই যান রাজারহাটের সিএনসিআই ক্যাম্পাসে। ১০-০৫ নাগাদ তাঁরা মাস্ক পরে ঢোকেন সেখানকার কোভিড হাসপাতালে। কথা বলেন সুপারে সঙ্গে। প্রশাসনিক সব তথ্য জোগাড় করার পর বিস্তারিত খোঁজখবর নেন চিকিৎসার। তার পর পিপিই পরে ঢোকেন ওয়ার্ডে। কথা বলেন রোগীদের সঙ্গে।
রাজারহাট থেকে সোজা তাঁরা চলে যান টালিগঞ্জের এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। সুপারের আতিথেয়তায় ১১-৫৫ নাগাদ কেন্দ্রীয় দল ঢোকে সেখানে। সদস্যরা প্রথমেই যান দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে। হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে উঠে আসে মোট রোগী ভর্তি ও আক্রান্তের সংখ্যা, আইসোলেশন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারে থাকা রোগীদের হিসেব। তার পরই পিপিই চেয়ে ওয়ার্ডে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তাঁরা। প্রথমে যান হাসপাতালের পুরোনো ভবনের সারি ওয়ার্ডে।
সেখান থেকে যান নতুন সুপার-স্পেশ্যালিটি ব্লকের কোভিড হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে, ও তারপর আইসোলেশন ওয়ার্ডে যেখানে ভর্তি রয়েছেন প্রায় ১৭০ রোগী। তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে সামান্য কথা বলেই চলে যান পজিটিভ ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন শ’খানেক রোগী। তাঁদের মধ্যেই অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেন, তাঁরা কবে ভর্তি হয়েছেন, কবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, কবেই বা রিপোর্ট এসেছে ইত্যাদি। এমনকী চিকিৎসকদের আচরণের খোঁজ-খবরও নেন তাঁরা। এর পর তাঁরা চলে যান ওই ভবনের চারতলায় ৩৪০ নম্বর বেডের কাছে যে ওয়ার্ড থেকে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছিল ভিডিয়ো।
বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব জানান, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কলকাতার লকডাউন ও কোভিড হাসপাতালের কাজকর্ম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। ওঁরা বলেছেন, কলকাতার যে সব এলাকায় তাঁরা গিয়েছিলেন, সেখানে লকডাউন সন্তোষজনক। ওঁরা দুটি কোভিড হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন। রাজারহাট-সিএনসিআই ও কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁদের মতে, সেখানে প্রটোকল মেনে কাজ হচ্ছে। তাঁদের এই বক্তব্যর কোনও প্রমাণ আমার কাছে নেই। তাই আমাদের দেখতে হবে, সরকারি ভাবে তাঁরা কী জানালেন।’
এ দিন দুপুরে তাঁরাও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া একটি আবাসন এবং শিলিগুড়ি জংশন এলাকায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের স্কুল বাণীমন্দিরে তৈরি কোয়ারান্টিন ভবন পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত যোশী বলেন, ‘রাজ্য সরকারের তরফে আমাদের উত্তরবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু তথ্য আমরা চেয়েছি। কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখলাম। এ বার সমস্ত তথ্য ও অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখার পরেই বলতে পারব যে আমরা কতটা সন্তুষ্ট।’ তবে তাঁর বক্তব্য, ‘আজই রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছে।’ করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গে কতজন এবং কী ভাবে মারা গিয়েছেন তার তথ্যও প্রতিনিধি দলটি জানতে চেয়েছে।
নবান্নে এ দিন মুখ্যসচিবও বলেন, ‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল পাঠানো নিয়ে রাজ্যের আপত্তি থাকলেও সব রকম সহযোগিতা করা হয়েছে। ওঁরা যা তথ্য চেয়েছিলেন, সব দেওয়া হয়েছে। প্রেজেন্টেশনও দেওয়া হয়েছে। ওঁরা এলাকা ঘুরেছেন। আর কোনও তথ্য দিতে পারব না। এখন চাইলে, ই-মেল করে নিতে হবে। শিলিগুড়িতে আমার ডিভিশনাল কমিশনার ওদের সঙ্গে বারবার দেখা করে সব তথ্য দিয়েছে। ওঁরা কয়েকটি জায়গায় যেতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন।’
মুখ্যসচিবের কথায়, ‘ওরা কবে ফিরবেন বা ছুটি করে এখানে বিএসএফ ও এসএসবি গেস্ট হাউসে এক সপ্তাহ কাটাবেন, সেটা ওঁদের ব্যাপার। ওঁরা আমাদের আতিথেয়তা নিয়ে এখানে থাকছেন না। কলকাতায় বিএসএফ গেস্ট হাউস আর উত্তরবঙ্গে এসএসবি গেস্ট হাউসে রয়েছে প্রতিনিধি দল।’