অক্ষয় তৃতীয়াতেও গণেশ প্রতিমা বিক্রি পণ্ড, মুখভার কুমোরটুলির
মুখভার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। নববর্ষে এমনিতেই গণেশ প্রতিমা বিক্রি হয়নি। আশা ছিল, ১৪ এপ্রিল প্রথম পর্বের লকডাউন কেটে গেলে হয়ত কিছুটা স্বাভাবিক হবে বাজার। অক্ষয় তৃতীয়াকে ঘিরে ফের জমে উঠবে কুমোরটুলি, বিক্রি হবে লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন এই লকডাউনকে ৩ মে পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, মৃৎশিল্পীদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাই জলে গেল। এখন তাঁদের একটাই চিন্তা, কীভাবে সংসার চালাবেন।
প্রথম পর্যায়ে লকডাউনের সময়সীমা ছিল ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই কথা মাথায় রেখেই অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য কোমর বাঁধছিল কুমোরটুলি। শিল্পীদের ঘরে ছোট-মাঝারি বিভিন্ন মাপের গণেশ ঠাকুর তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল। এমনকী প্রতিমায় রংয়ের কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে লকডাউন ঘোষণায় মাথায় হাত তাঁদের। ঝাঁপ বন্ধ হয় কুমোরটুলির।
শিল্পী সুকুমার পাল বলেন, কুমোরটুলির উপর দিয়ে অনেক ঝড় জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু এত বড় বিপর্যয় তাঁরা কোনদিনও দেখেননি। সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। শিল্পী জবা পাল বলেন, কুমোরটুলিতে সেই অন্নপূর্ণা পুজো থেকেই মন্দা শুরু হয়েছে। এখানে অন্নপূর্ণা, বাসন্তী-দুর্গা, রামনবমী উপলক্ষ্যে রাম-হনুমান থেকে শুরু করে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি হয়। কিন্তু এবার করোনা সব মাটি করে দিল।
শিল্পী সনাতন পাল বলেন, সামনে বড় কোনও পুজো-পার্বণ নেই। তাই এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠেছে। এখন ভালোয় ভালোয় এই মরক কেটে গেলে আমরা যে সব মডেল ও প্লাস্টার অব প্যারিসের কাজ করে থাকি, সেই কাজ করে অন্তত সংসারটা চালানো পারব।
শিল্পী কমল পালের কথায়, ফি বছর প্রতিমা শিল্পীদের ঘরে কোথাও ২০০-৩০০ কোথাও ৫০০টি করে ছোট, মাঝারি সাইজের গণেশ প্রতিমা তৈরি হয়। তাতে সকলেই কম বেশি লাভবান হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ভাণ্ডার একেবারে শূন্য। তাঁর আক্ষেপ, আমাদের তৈরি প্রতিমা নিয়েই মানুষ পুজো-অর্চনা করে আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্তু আমাদের ঘরে যে অভাব, দুঃখ-যন্ত্রণা, কষ্ট রয়েছে, সেসব দেখার সময় কোথায় মানুষের।