দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

নেটওয়ার্ক দুর্বল, তাই মাচা বেঁধে ‘ওয়ার্ক ফ্রম ট্রি’ 

April 25, 2020 | 2 min read

নেটওয়ার্কের নাগাল পেতে গাছের মগডালে চড়ে দিনকয়েক আগে শিরোনাম হয়েছিলেন আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলের আম্পায়ার অনিল চৌধুরি। লকডাউনে ওয়ান ডে সিরিজ বাতিল হয়ে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলার ডাংগ্রোলে নিজের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন অনিল। সেখানে নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটের হাল এমনই যে গাছের মগডালে চড়ে তার সন্ধান চালাতে হয় তাঁকে।

বাঁকুড়ার ইন্দপুরের আহন্দা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত পতির অবস্থা অনিলের মতোই। গ্রামের মধ্যে নেট ব্যবহার করে কিছু আপলোড করা তো দূর, ফোনে সামান্য কথাটুকু বলতে গিয়েও হোঁচট খেতে হয় বারবার। সেখানে ‘ত্রাতা’ নদীর ধারের নিম গাছ। মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেতে রোজ তারই মগডালে গিয়ে বসছেন পেশায় শিক্ষক সুব্রত। শক্তপোক্ত একখানা মাচা বানিয়ে ফেলেছেন বাঁশ দিয়ে। মাথার উপরে ত্রিপলের ছাউনি। সেখান থেকেই চলছে অনলাইন শিক্ষাদান। লকডাউনে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর বদলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম ট্রি’ চলছে তাঁর।

বছর পঁয়ত্রিশের সুব্রত কলকাতার একটি নামী চাকরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেন। সেখানেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। গ্রামে আসেন মাঝেমধ্যে। মার্চে এসেছিলেন দিনদুয়েকের ছুটি কাটাতে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় লকডাউন। তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও আপাতত বন্ধ।

তবে পঠনপাঠন যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য দ্রুত অনলাইন ক্লাস শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরাও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু করেন। এই অবস্থায় অনলাইন ক্লাস শুরু করতে গিয়েই নাকানিচোবানি খেতে হয় ইতিহাসের শিক্ষক সুব্রতকে। দু’টি নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের সিমকার্ড থাকা সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হয়নি। তাঁর গ্রামে ইন্টারনেটের হাল অত্যন্ত খারাপ। বাড়ির ছাদে উঠে কোনওমতে ফোনে কথা বলা গেলেও ছবি কিংবা ভিডিয়ো আপলোড করা কার্যত অসম্ভব।

তা হলে উপায়? পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় বেরোয় পথ। গ্রাম লাগোয়া অড়কষা নদীর ধারে ফাঁকা জায়গায় গেলে সিগন্যালের সমস্যা হয় না। সেখানে মস্ত এক নিমগাছের মগডালে মাচা বাঁধেন সুব্রত। যাবতীয় সমস্যার সমাধান। দুর্দান্ত নেটওয়ার্ক। ভয়েস কল, ভিডিয়ো আপলোডিং — সবই হচ্ছে নির্বিঘ্ন। মাচায় বসে দিনভর দিব্যি রমরমিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন সুব্রত। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে নেটওয়ার্ক দুর্বল। বাধ্য হয়ে নদীর ধারে নিম গাছের মগডালকে বেছে নিই। সেখানে ভালো সিগন্যাল পাওয়া যায়। ক্লাস নিতে সমস্যা হয় না।’

সকাল সাড়ে ৯টা বাজলেই বই, খাতা, নোটস, জল, টিফিন নিয়ে নিম গাছে মগডালের মাচায় হাজির হন শিক্ষক। ক্লাস শুরু ৯ টা ৩৫ মিনিটে। সন্ধ্যা ৫টা ৫৫মিনিটে ক্লাস শেষ করে পড়ন্ত বিকেলে গাছ থেকে নেমে বাড়ি ফেরেন সুব্রত। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#lock down, #work from tree, #poor network connection

আরো দেখুন