রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

হোসিয়ারি শিল্পে রাজ্যে ক্ষতি ১,০০০ কোটি টাকা 

April 25, 2020 | 2 min read


করোনা ও লকডাউনের জোড়া ধাক্কায় রাজ্যের হোসিয়ারি শিল্প সম্পূর্ণ স্তব্ধ। ছোট-বড় সংগঠিত-অসংগঠিত সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১৮,০০০ হোসিয়ারি ইউনিট গত এক মাস যাবৎ বন্ধ থাকায় আপাতত কর্মহীন দু’লক্ষের কিছু বেশি মানুষ। পরোক্ষ কর্মসংস্থান ধরলে সংখ্যাটি কমপক্ষে আরও দশ লক্ষ হবে। আর ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন চালু হওয়ার পরে শুধু এ রাজ্যে হোসিয়ারি ক্ষেত্রের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা, যা আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ, লকডাউন সম্পূর্ণ না উঠলে কোনও কারখানাই খোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মালিকরা। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন ও মজুরি খাতে অর্থ দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্জি জানিয়েছে ফেডারেশন অফ হোসিয়ারি ম্যানুফাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এফওএইচএমএ)।

সংগঠনের সভাপতি কুঞ্জবিহারী আগরওয়ালের সাফ কথা, ‘সরকার যদি আমাদের কর্মীদের বেতন ও মজুরি খাতে আর্থিক সহায়তা না দেয়, তা হলে আমরা কী করব? এক মাস কারখানা বন্ধ। কোনও বিক্রি নেই। অথচ, স্থায়ী খরচ রয়েছে। সরকারের সহায়তা না পেলে অনেক ইউনিটই বেতন কমানো বা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে।’

ভারতের প্রথম হোসিয়ারি কারখানা ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে উঠেছিল খিদিরপুরে। এখন কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে হোসিয়ারি কারখানাগুলি মূলত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সারা দেশের ৫০ শতাংশ হোসিয়ারি কারখানাই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আর ভারতে মোট হোসিয়ারি পণ্য উৎপাদনে ৩৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে রাজ্যের।

ডলার ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনোদ গুপ্তা বলেন, ‘রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত এলাকায় ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কারখানা চালু করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করা যাবে না। স্টিচিং ইউনিটে ৮-১০ জন লাগে। সেখানে ২-৩ জন কর্মী নিয়ে কী করে কাজ হবে?

হোসিয়ারি শিল্পে রাজ্যে ক্ষতি ১,০০০ কোটি টাকা

রাজ্যের হোসিয়ারি ইউনিটগুলির জন্য সুতো আসে দক্ষিণ ভারত থেকে। লকডাউনে সেই সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে, তার পরে চেইনে থাকা নিটিং, প্রসেসিং ও কাটিং ইউনিটগুলিও এক মাস ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে। আর এগুলির সমস্ত পুর এলাকায় হওয়ায় লকডাউন না ওঠা পর্যন্ত খোলার উপায় নেই। অথচ, লকডাউনের মধ্যেও গ্রামীণ এলাকায় হোসিয়ারি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। কিন্ত, সেই চাহিদা মেটানোর কোনও অবকাশ নেই।

টিটি লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা আইসিসি-র ন্যাশনাল টেক্সটাইলস কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় জৈনের কথায়, ‘লকডাউন তো একেবারে উঠবে না, ধাপে ধাপে উঠবে। আর বাস, ট্রেন না চললে কারখানা খুলবে না। শ্রমিক,কর্মচারীদের কারখানায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে যদি তাঁদের কারও করোনা হয়, তা হলে সরকার বলেছে কারখানা বন্ধ করে মালিককে জেলে ঢোকাবে। ফলে, কারখানা খোলার রিস্ক কোনও মতেই নেওয়া যাবে না।’ তাঁর হিসাবে করোনার জেরে লকডাউনের জন্য চলতি অর্থ বছরে দেশের হোসিয়ারি শিল্প ক্ষেত্র গত বছরের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ আয় হারাবে। তবে লকডাউন ৩ মে-র পর আরও বাড়লে আয় তার থেকেও বেশি কমবে।

ভারতে হোসিয়ারি পণ্যের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক বাজার প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা। আরও ১৫,০০০ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানির বেশিরভাগটাই অবশ্য তামিলনাড়ুর তিরুপুরের দখলে। সেখানেও বাংলার একাধিক হোসিয়ারি শিল্পোদ্যোগীর ইউনিট রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় স্তব্ধ রপ্তানিও।

এই পরিস্থিতিতে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর কার্যকরী মূলধন নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন কারখানা মালিকরা। জেজি হোসিয়ারির কর্ণধার বিশ্বনাথ সাক্সেরিয়া জানান, সরকারের উচিত কার্যকরী মূলধন জোগানোর ব্যবস্থা করা। অন্য দিকে, বিনোদ গুপ্তা বলেছেন, ‘আমরা ব্যাঙ্ক সুদের উপর ৫০ শতাংশ ছাড় চাই। এখন সুদের হার ৯ শতাংশ। আমরা চাইছি তা সাড়ে চার শতাংশ করা হোক। পাশাপাশি, কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় যে বিদ্যুতের বিল আসছে, তা সম্পূর্ণ মকুব করার জন্য আমরা রাজ্য সরকারকে আর্জি জানিয়েছি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Corona West Bengal, #textile industry, #Lockdown

আরো দেখুন