‘শামুক’ শর্ট ফিল্ম দিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেল লঞ্চ করলেন কে?
জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেও, বাড়ির সকলের কাছে তিনি ঘরের মেয়ে। যৌথ পরিবারে থাকেন। সকলকে নিয়ে হইহই করতে ভালোবাসেন। লক্ষ্মী প্রতিমার মত চেহারা। দুর্গা ঠাকুরের মত হাসি। বাংলার ঘরের মেয়ে অপরাজিতা আঢ্য। গৃহবন্দী তিনিও।
তবে বাড়িতে থাকতে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না তাঁর। লেখালেখির কাজ করছেন। মোবাইলে ছবি তুলে কিছু শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছেন। সঙ্গে বাড়ির কাজ তো রয়েছে। এরইমধ্যে খুলে ফেলছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল।
বেশ কিছুদিন ধরেই ইউটিউব চ্যানেল খোলার কথা ভাবছিলেন অপরাজিতা। গৃহবন্দী হয়ে পড়ায় বেশ কিছুটা সময় মিলেছে। তাই কাজটা সেরে ফেললেন তিনি। এই প্রসঙ্গে অপরাজিতা বললেন, ‘অনলাইনে আমি নিজের প্রচুর জিনিস দেখতে পাই। আমার ইনস্টাগ্রাম থেকে কিংবা ফেসবুক থেকে লোকজন নিয়ে পোস্ট করে দেয়। তার কোয়ালিটি খুব খারাপ হয়। আমি নিজের কিছু বিশেষ জিনিস দর্শককে উপহার দিতে চাই। এই চ্যানেলে সেগুলোই থাকবে। আমি একটা চিত্রনাট্য লিখলাম। সেটা শ্যুট করেছি। আমি আর ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা রয়েছে ছবিটাতে। দুজন পৃথকভাবে দুই জায়গায় শ্যুটিং করেছি। সেটা দিয়ে চ্যানেলটা শুরু হবে। আমার নাচে স্কুলের কিছু জিনিস রাখবো। আমার ব্যক্তিত্বের আয়না হবে এই চ্যানেল। নিজের কিছু বক্তব্য যদি থাকে সেটা বলব। একটা সময়ের পর একটা প্লাটফর্ম লাগে, নিজের কথা বলার জন্য। গৃহবন্দী হওয়ায় সকলের কাছে বিনোদন অপশন অনেকটা কমে গিয়েছে।
ডিজিটাল মাধ্যম এখন বেশ জনপ্রিয়। অপরাজিতাও এই মাধ্যমে আরও সড়গড় হচ্ছেন। বাড়িতে থাকার প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘বাড়িতে তো কখনও বসে থাকেনি। বরং বেশী কাজ করেছি। ১৩ বছর বয়স থেকে খাওয়া-পড়া বাদ দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনও টাকা নিতে হয়নি। নিজের নাচের স্কুল ছিল। নাচ শিখিয়ে উপার্জন করেছি। সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। এই প্রথম বসে আছি। তবুও বাড়ির অনেক কাজই করছি, বসে আছি বলা চলে না। কিন্তু নিজের যে কাজটা করলে ভালো লাগে। রসদ পাই, সেটা সম্পূর্ণ চলে গিয়েছে। তাই ছবি বানিয়ে, মনোলগ বানিয়ে, নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে।’
‘শামুক’ নামে একটি শর্ট ফিল্ম দিয়ে নিজের চ্যানেল লাঞ্চ করছেন অপরাজিতা। এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই ছবি করার ভাবনা মাথায় আসে তাঁর। বন্ধু গল্পের ছলে তাঁকে বলেন, ‘তোকে ফোন করতে ভাল লাগে। কারণ তুই একমাত্র আক্ষেপ প্রকাশ করিস না। বাকিরা তো সবাই বলে আর পারছি না।’
উত্তরে অপরিচিত বলেন, ‘আমার অসুবিধা হচ্ছে না। আমি মনে করি, শামুক যখন মুখটা তুলে চলে, বাইরের পৃথিবীটা তার কাছে যতটা সুন্দর। শামুক যখন খোলসের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে রাখে, তখন ভেতরের পৃথিবীটা ও তার কাছে ততটাই সুন্দর। আমি এই মন্ত্রে বিশ্বাসী।’ বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথন শেষ করে অপরিজিতার হট করে মাথায় আসে এটাই তো দারুণ একটা ভাবনা। এই নিয়েই তো ছবি হতে পারে। তারপরে বানিয়ে ফেলেন ‘শামুক’।
লকডাউন এর আগে দশটা ছবি স্ক্রিপ্ট লক করেছিলেন অপরাজিতা। দশটা ছবিই তাঁকে ঘিরে। কিন্তু করোনা ভেস্তে দিল সবকিছু। সমস্ত শ্যুটিং বন্ধ। অপরাজিতা মনে করেন, বড়দিনের আগে দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখবেন, এটা হয়তো ভাবা ঠিক নয়। শ্যুটিং কবে শুরু হবে তাই নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে তাঁর। এই পরিস্থিতিতে সিনেমা তৈরী হওয়া, সেটা ডিস্ট্রিবিউট হওয়া, হলে মুক্তি পাওয়া, দর্শক আসা, কোনওটা নিয়ে আশাবাদী নন তিনি।
অপরাজিতা মনে করেন, এই মুহূর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে বেশী কাজ হবে। হয়তো ধারাবাহিকের শ্যুটিং চালু হয়ে যেতে পারে। ধারাবাহিকের শ্যুটিং শুরু হলেও সেটা কতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে অপরাজিতার মনে। তাঁর কথায়, ‘শ্যুটিং ফ্লোরে খুব একটা হাইজিন মেনটেন করা সম্ভব নয়। হেয়ার ড্রেসার প্রত্যেকের জন্য আলাদা চিরুনি রাখেন না। মেকআপ আর্টিস্ট একই মেকআপ কিট দিয়ে সকলকে মেকআপ করেন। আমাদের বাংলায় বাজেট কোথায়? সেভাবে মেনটেন করা তো সত্যি সম্ভব নয়। আজ শ্যুটিং শুরু হল। কাল কারো করোনা ধরা পরল। পরশু আবার সব সিল করে দেওয়া হলো। তাতে তো আরো ক্ষতি।’