রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রেশনের চাল আর জঙ্গলের কচুর ভরসায় রাভারা

April 26, 2020 | 2 min read

জঙ্গলের সন্তান ওঁরা। সরকারি সহযোগিতায় সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মারণ করোনা ফের অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে রাভাদের। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া চাল আর জঙ্গল থেকে জোগাড় করা কচুর ভরসাতেই দিন কাটছে রাভাদের। ভবিষ্যতের স্বপ্ন থমকে গিয়েছে।

জলদাপাড়া বনবিভাগের ধুমচি অরণ্য লাগোয়া পটে আঁকা গ্রাম ধুমচি-রাভা বস্তি। আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকের ওই গ্রামে বসবাস ৭৫টি রাভা পরিবারের। এক সময় শুধুমাত্র বনের উপর নির্ভর করেই বাঁচতেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। বছরভর নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে হত ওঁদের। বর্তমান রাজ্য সরকারের সহায়তায় নতুন করে বাঁচার পথ পেয়েছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। ঊষর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ ঘুরিয়ে দিয়েছিল ওই রাভা গ্রামের অর্থনীতি। সঙ্গে বুনন শিল্পের মাধ্যমেও বাড়তি রোজগারের পথ পেয়েছিলেন ওই বনবস্তির বাসিন্দারা। বিনা সুদে সরকারি ঋণ পেয়ে গামছা বুনে বাড়তি রোজগারের পথ পেয়েছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

কিন্তু করোনার আবহে লকডাউন যেন আচমকাই থমকে দিয়েছে ওই গ্রামকে। পুকুরে মাছ থাকলেও তা বাজারজাত করতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের বোনা বাহারি গামছা পড়ে রয়েছে ঘরে ঘরে। সুতোর অভাবে বন্ধ বুনন শিল্প। কারণ ওই গামছা বোনার সুতো আসে ভুটানের ফুন্টসোলিং ও অসমের গোঁসাইগাঁও থেকে। লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়েছে যাতায়াত। আসছে না সুতো। তাই বন্ধ গ্রামের তাঁতশিল্পের মাকু। এছাড়াও বাঁশ কেটে নানা ধরনের শিল্পসৃষ্টিতে পটু ওই গ্রামের অনেকেই। কিন্তু তাতেও বাধ সেধেছে লকডাউন। ঘর সাজানোর ওই সব জিনিসের চাহিদা নেই বাজারে। ফলে ঘরে ঘরে থাবা বসিয়েছে অভাব।

রেশনের চাল আর জঙ্গলের কচুর ভরসায় রাভারা

গ্রামের প্রবীণা ফুলেশ্বরী রাভা বলেন, ‘অভাবের মধ্যেও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যে গামছা বুনব, সুতো কই? সে তো আনতে হয় ভুটান অথবা অসম থেকে। যাতায়াত বন্ধ। সুতো আসছে না। বন্ধ মাকু। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে বিকল হওয়ার পথে ওই যন্ত্রগুলি। মারণ রোগের থাবায় আমরা পথে বসার মুখে। সরকারের দেওয়া চাল আর জঙ্গলের কচুই এখন ভরসা!’

গ্রামের এক বাসিন্দা পুলিন রাভা বলেন, ‘সরকার একশো দিনের কাজের মাধ্যমে গ্রামে পুকুর খনন করে দেওয়ার পর থেকে, সত্যিই আমরা নতুন করে বাঁচতে শিখেছিলাম। ওই মাছ বিক্রি করে আমরা যে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিলাম, তাতে ঘরে ঘরে শুধু সমৃদ্ধিই নয়, ওই লভ্যাংশ থেকে গ্রামের পথঘাটও পাকা করা হচ্ছিল। কিন্তু লকডাউন কোপে পড়ে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছি। আতঙ্কে আছি, আবার সেই পুরনো দিন ফিরে আসবে না তো?’

তবুও ওই রাভা জনজাতির মানুষগুলো মাঝেমাঝেই তাঁদের মাছ ধরতে যাওয়ার সময়ের গান ‘নাকচ্যাড়ানি’র সুর-তাল-ছন্দে নেচে ওঠেন সব অভাব ভুলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Lockdown, #alipurduar, #rabha tribe

আরো দেখুন