লকডাউনে ২০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে রাজ্যের ইস্পাত শিল্প
লকডাউনের এক মাসেই ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১০,০০০ কোটি টাকা। লকডাউন উঠে গেলে বাজারে দ্রুত ইস্পাতের চাহিদা ফিরবে এমন সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকার আর্থিক সহায়তা না দিলে রাজ্যের বড়, মাঝারি, ছোট ইস্পাত তৈরির সংস্থাগুলিতে সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ প্রায় এক লক্ষ কর্মীর এপ্রিল মাসের বেতন পাওয়া ঘোর অনিশ্চিত।
পাশাপাশি, আরও যে প্রায় চার লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ভাবে এই শিল্প ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের ভবিষ্যতও এক রকম সুতোর উপর ঝুলছে। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গোটা অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টাটা মেটালিক্স, ইস্কো, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের মতো বৃহৎ ইস্পাত কারখানা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বড় ও মাঝারি মিলিয়ে ২৫০-টির মতো লৌহ ও ইস্পাত কারখানা রয়েছে। তারা মূলত স্পঞ্জ আয়রন, ফেরো অ্যালয়, পিগ আয়রন, ইস্পাতের বিলেট ও প্যালেট এবং টিএমটি বার উৎপাদন করে। বছরে তাদের সম্মিলিত বিক্রি ১ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। এ রাজ্য থেকে মূলত ফিনিশনড ও সেমি-ফিনিশড ইস্পাত পণ্য আফ্রিকা, ইউরোপ, চিন, নেপাল, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি হয়, যা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ।
গত এক মাসে কোমায় চলে গিয়েছে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, নয়া প্রকল্প শুরুতেও আগামী অন্তত ছয় মাস এমনই ভাটা চলবে। ফলে, মাথায় হাত ইস্পাত উৎপাদনকারীদের। কারণ, বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টিএমটি বার উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম পাঁচ রাজ্যের একটি। বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা টিএমটি বার থেকেই আসে।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কী কী সহায়তা চায় রাজ্যের ইস্পাত শিল্প? কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবিগুলির তালিকার মধ্যে রয়েছে ঋণে সম্পূর্ণ সুদ মকুব, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে অনাদায়ী ঘোষণা না করা, কর্মীদের বেতন খাতে সরকারি ভর্তুকি, কর্মীদের পিএফ ও ইএসআই খরচ সরকারের বহন করা এবং রপ্তানিতে উৎসাহব্যঞ্জক প্রকল্প ঘোষণা করা।
রাজ্যের লৌহ ও ইস্পাত কারখানাগুলির মোট খরচের ২০ শতাংশ যায় বিদ্যুৎ বিল দিতে। কারখানা বন্ধ অবস্থায় বিদ্যুৎ খরচ না করলেও সংযোগ নেওয়ার জন্য স্থায়ী ভাবে নিয়মিত তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিল মেটাতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে কারখানা মালিকরা।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিলে ছাড় একমাত্র কেন্দ্র দিতে পারে। রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই।