বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বিপাকে সহপাঠী, পাশে প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর

April 27, 2020 | 2 min read

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র জনি বিশ্বাস পারিবারিক গোলমালের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণ মাইতির সহায়তায় হিন্দু হস্টেলে থাকার জায়গা পেয়েছিলেন জনি। স্কলারশিপের যৎ-সামান্য টাকা দিয়েই খরচ সামলাতেন। কিন্তু লকডাউনে হস্টেলে তালা পড়ায় তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়েছে এক বন্ধুর বাড়িতে। বাড়ি থেকেও টাকার সংস্থান করতে পারেননি। এই পর্যায়ে কার্যত পথে বসার মতো অবস্থা এই ছাত্রের। কান্নাভেজা গলায় জনি বলছিলেন, ‘পড়ার খিদের জন্যই এতটা কষ্ট করে চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন পেটের খিদেকে বাধ মানাব কীসে?’ হস্টেলে তাও দু’বেলা খাবারের কোনও সমস্যা ছিল না। প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদ এই পরিস্থিতিতে তাঁকে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। জনির কথায়, ‘এই টাকাটা না পেলে খারাপ কিছু একটা হয়ে যেত।’

প্রেসিডেন্সিরই আর এক ছাত্র গ্রামীণ হাওড়ার বাসিন্দা সপ্তক হালদার পড়াশোনা করেন জিওলজি বিভাগে। বাবা তবলার মাস্টারমশাই। মা একটি প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করেন। দু’জনেরই রোজগার বন্ধ। বাড়িতে চাল-ডাল বাড়ন্ত। ছেলের পড়াশোনা, সংসার খরচ চলবে কীভাবে ভাবতে ভাবতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা। সপ্তক স্কলারশিপ পেয়েছেন বটে, তবে হাজার কষ্টের মধ্যও তাঁরা ছেলের স্কলারশিপের টাকায় হাত দেননি। সপ্তকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুদিন আগে ছাত্র সংগঠন এসএফআই চাল, ডাল, আটা, তেল দিয়ে এসেছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া পূর্ণেন্দু গড়, মনীষা চৌধুরী, আমিরুল মোল্লাদের অবস্থাও তথৈবচ। এই পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরা কেউ কারখানার দিনমজুর, কেউ ভ্যান চালান, কেউ যুক্ত কৃষিকাজে। লকডাউনের জেরে তালা পড়েছে তাঁদের রোজগারে। পূর্ণেন্দু আর তাঁর মা থাকেন হাসনাবাদে। পূর্ণেন্দু শুধু বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সকলেরই তো একই অবস্থা। কারও হাতে কাজ নেই। টাকা নেই।’ আমিরুল বাংলার ছাত্র। থাকেন ভাঙড়ে। বাবা ভ্যান চালান। পড়াশোনার খরচ চালাতে আমিরুল একটি ওষুধের দোকানের ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। সে সব বন্ধ। আর পড়াশোনা চালাতে পারবেন কি না, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও।

এই পড়ুয়াদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সহপাঠীরা। যাদবপুরের কলা শাখা ও প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদের তরফে এই বন্ধুদের জন্য তহবিল সংগ্রহ অভিযান চালানো হচ্ছে। যাদবপুরের কলা শাখার ছাত্র সংসদের সভানেত্রী তীর্ণা বলেন, ‘সমস্ত ছাত্র প্রতিনিধিদের থেকে তালিকা নিয়ে এমন প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রীর নাম আমরা পেয়েছি। তাঁদের জন্য তহবিল গঠনের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে।’ প্রেসিডেন্সির ছাত্র দেবনীল পালের বক্তব্য, ‘তহবিল গঠনের পাশাপাশি সাংগঠনিক নেটওয়ার্কেও প্রয়োজনীয় রেশন ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’ আর্থিক সহায়তা করে যাদবপুরের বাংলার অধ্যাপকরা বিভাগের দুর্দশাগ্রস্ত এমন প্রায় ১৩-১৪ জন পড়ুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার ও সল্টলেক ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন কর্মী, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরাও আর্থিক সঙ্কটে। ক্যান্টিন কর্মীদের রোজগার বন্ধ। নিরাপত্তা কর্মীরা ঘর ছেড়ে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, রেশনের দাম আকাশছোঁয়া, সঙ্গে যা ছিল সব প্রায় শেষ। এই অবস্থায় শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা গৌরব দত্ত মুস্তাফির উদ্যোগে এই মানুষগুলোর হাতে প্রয়োজনীয় রেশন তুলে দেওয়া হয়। রবীন্দ্রভারতীর গবেষক ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ দে বলেন, ‘অনেক পড়ুয়া আমাদের যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁরা টাকা-পয়সা নিতে চাননি। আমরা তাই কয়েকজন প্রয়োজনীয় রেশন পৌঁছে দিয়েছি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#presidency university, #Lockdown, #jadavpur university

আরো দেখুন